দেশে প্রতি বছরই আমন মৌসুমে ঝাকে ঝাকে ইঁদুর এসে হাজার হাজার মেট্রিক টন ফসল খেয়ে ফেলে। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়। তার পরেও উৎপাদিত ফসলের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যায়। এবার আমন মৌসুমে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় ১৮ লাখ ২৪ হাজার ২০ টি ইঁদুর নিধন করে ১৩ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন ফসল ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতি বছর রংপুর অঞ্চরে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান ইঁদুরের কারণে কৃষকরা গোলায় তুলতে পারে না। যা আমনের মোট উৎপাদনের ৬ শতাংশ। প্রতি মৌসুমে গমের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ, আলুর ৬ শতাংশ, শাক সবজির ৫ শতাংশ, নারিকেলের ১০ শতাংশ ও আনারসের ১০ শতাংশ ফলন রাক্ষুসি ইঁদুররা ভক্ষন করে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ইঁদুর নিধন হয়েছে রংপুর জেলায়। এখানে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৪ টি ইঁদুর নিধন করে ১০ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন ফসল রক্ষা করা হয়েছে। গাইবান্ধায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০টি ইঁদুর নিধন করে ৮৬২ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন, কুড়িগ্রামে ৯৮ হাজার ৫৯২টি ইঁদুর নিধন করে ৭৩৯ মেট্রিকটন, নীলফামারীতে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৮টি ইঁদুর নিধন করে ১ হাজার ৩৩০ দশমিক ৯ মেট্রিকটন এবং লালমনিরহাটে ৮৮ হাজার ২৬৬ টি ইঁদুর নিধন করে ৬৬২ মেট্রিক টন আমন ধান রক্ষা করা হয়েছে।
এবার এ অঞ্চলের ইঁদুর নিধনে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৩১ জন কৃষিকর্মী, ছাত্রছাত্রী, ও কৃষক-কৃষাণী অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবছর ইঁদুর নিধনকারিদের আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার দেয়া হলেও এবার করোনার কারণে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। প্রতিবছর ইঁদুরের দ্বারা বিভিন্ন ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির নমুনা ও ইঁদুর নিধনের বিভিন্ন ফাঁদ প্রদর্শন করা হলেও এবার তা করা হয়নি। তারপরেও বিগত বছরের চেয়ে ৮ লাখ বেশি ইঁদুর নিধান করা হয়েছে।
সরকারিভাবে ১৯৮৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে এই ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু হয়। কিন্তু কার্যকরভাবে ইঁদুর নিধন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মোট উৎপাদনের একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যাচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ মেজবাহুর ইসলাম জানান, ইঁদুর নিধন গুরুত্ব, প্রকৃতিতে ইঁদুরের বিচরণ, ইঁদুরের প্রকারভেদ ও বংশবৃদ্ধির ধরণ, বিভিন্ন ফসলে ইঁদুরের ক্ষতির ধরণ ও ক্ষতির পরিমাণ, ইঁদুরের উপস্থিতির চিহ্ন, ইঁদুর নিধনের প্রয়োজনীয়তা, নিধনের বিভিন্ন পদ্ধতি এবং আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ে ইঁদুর নিধন কৌশল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করায় এবার বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেশি ইঁদুর নিধন ও বেশি ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন