বন্যার দাগ শুকিয়ে যায়নি। এখনো ক্ষত নিয়ে আছে বগুড়ার যমুনা নদী পাড়ের চাষিরা। সেই ক্ষত সারিয়ে নিতে এবার চাষিরা সরিষা চাষ করে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন। চাষের পর সেই সরিষায় এখনে মৌমাছি আসতে শুরু করেছে। ফুলে ফুলে গুন গুন করে উড়ছে আর বাতাসে দুলছে গোছা গোছা হলুদ সরিষার মাতানো ফুল।
উত্তরের বাতাসে আবার সরিষার সুবাসও ছড়িয়েছে। আর সেই সুবাসে সরিষা চাষিরা বুকের ভেতর রঙিন স্বপ্ন আঁকছে সরিষা চাষিরা।
বগুড়ার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলায় আগস্ট মাসে দুই দফা বন্যার পর আবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেও প্রচুর বৃষ্টিপাত ও আরো দুই দফায় বন্যায় আমনের চাষও ঠিক মত করতে পারেনি অনেক কৃষক। আমনের আবাদে ব্যর্থ হলে তারা সরিষা চাষে নেমে পড়ে। সেই কারণে জেলায় এবার সরিষা চাষও বেড়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় এবার ২৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন সরিয়ার তেল। কিন্তু আবহাওয়া ভালো থাকায় চাষ হয়েছে ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে সরিষার তেল উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় চাষ হয়েছিল ২৩ হাজার ১১৫ হেক্টর।
বগুড়ার সরিষা চাষিরা জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, শেরপুর উপজেলা নদী ও হাওড় বেশি থাকায় শীতের প্রকোপও বেশি। শীত আসবার আগে থেকেই স্থানীয় চাষিরা শীতকালিন সবজির পাশাপাশি সরিষার চাষ করে থাকে। দেশে সরিষার চাহিদা এবং বাজারে সরিষার দাম থাকায় উপজেলা পর্যায়ে চাষিরা উৎসাহিত হয়ে সরিষা চাষ করে যাচ্ছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কৃষকরা সরিষার পাশাপাশি রকমারি রবি ফসল চাষে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশেষ করে খণ্ড খণ্ড জমিতে লাগানো সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য মাঠে-প্রান্তরে শোভা পাচ্ছে। কোথাও কোথাও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সরিষা চাষিরা জানিয়েছেন, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষের শুরু থেকে ঘরে ওঠানো পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। মোটামুটি ভাল ফলন হলে উৎপাদন খরচ বাদে ৭-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়ে থাকে। তবে বাজার ভাল থাকলে সরিষায় আরও বেশি মুনাফা সম্ভব বলে তারা জানান।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা মধুপুর এলাকার সরিষা চাষি সাইফুল ইসলাম, আনোয়ার বাদশা, এমদাদুল হক টুকু, পাকুল্যা এলাকার জিএম আলী হাসান, ঠাকুরপাড়া এলাকার তোজাম্মেল হক, কোড়াডাঙ্গা এলাকার কমর উদ্দিন জানান, এবার তাদের এলাকায় সরিষার ক্ষেত বেশ ভালো হয়েছে। গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৬ মণ সরিষা উৎপাদন হয়েছে। এ বছর সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে তারা ভালো অর্থ ঘরে তুলতে সক্ষম হবে বলে জানান।
তারা আরো জানিয়েছেন, ফুল ফোটায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছিরা যেমন গুন গুন করছে ঠিক তেমিন মৌয়ালরা মৌমাছি থেকে মধু সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে।
বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন জানান, বগুড়ার আবহাওয়া এবং উন্নতজাতের কারণে হেক্টর প্রতি ভাল ফলন পাওয়া যাবে। সরিষার ফুল ফুটেছে। কিছু দিন পর সরিষা পুরোপুরিভাবে কাটা শুরু হবে। বগুড়ায় কয়েক দফা বন্যা হলেও সরিষার ক্ষতি হয়নি বরং ভাল হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন