গ্রামবাংলার কারুকার্যে ভরা বিভিন্ন রংয়ে ঐতিহ্য বহনকারী মাটির ঘরের গ্রাম ‘ধানজুড়ি’। দিনাজপুরের বিরামপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাঁওতাল অধ্যুষিত ধানজুড়ি এই গ্রাম। এই গ্রামের শতাধিক বসতঘরের অধিকাংশই নকশা ও রংয়ের ঐতিহ্যে মাটির বাড়ি।
পুরো গ্রামটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম ও সুন্দর করে সাজানো এবং প্রতিটি বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আলপনা দিয়ে অঙ্কিত। অনেক পর্যটক এদিকে এলে এই সাজানো গ্রামটি দেখতে ভিড় করেন।
সাঁওতালদের সম্ভাবনাময় ধানজুড়ি গ্রামটিকে যদি একটু সুন্দর করে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে সাজিয়ে তোলা যায় তাহলে এটিও হতে পারে পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্থান এমনটিই বলছেন স্থানীয়রা।
গ্রামটির এলাকায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ধানজুড়ি মিশন ও কুষ্ঠ হাসপাতাল। এ কারণে অনেক রোগী আসেন সেবা নিতে। দেশের অনেক স্থানের মানুষজনসহ এমনকি বিদেশিরাও ভিড় জমান এখানে। এখানে যে কেউ এলে এই মাটির বাড়িগুলো দেখতে ভোলেন না।
ধানজুড়ি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কেরোবিন হেমব্রমসহ বলেন, 'ধানজুড়ি গ্রামের সব বাড়িই মাটি দিয়ে তৈরি। আমাদের জনগোষ্ঠির ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এ মাটির বাড়ি নির্মাণ করে আসছি এবং এখনও মাটির বাড়িতে থাকছি। এছাড়া মাটির ঘরের তালার ওপরে বর্ষাকালে ধান রাখা যায়। এই মাটির বাড়িগুলোতে যেমন আদ্রতা থাকে না তেমনি বাড়ি তৈরিতে খরচও কম হয়।'
এদের অনেকে বলেন, 'আমাদের মা-বোনেরা ছোটকাল থেকেই মাটির বাড়ির কাজ শিখে, প্রতিটি মাটির বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আলপনা তৈরি করে আরও সুন্দর করে তোলেন। দেয়াল থেকে শুরু করে, জানালা, দরজা, সবজায়গায় সুন্দর আলপনা আঁকেন। বছরে দুইবার রঙ ও আলপনায় সাজানো হয় বাড়ি। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবের আগে বাড়িগুলোকে সাজিয়ে তোলা হয়।'
স্থানীয় বাসন্তি রানী বলেন, 'বর্তমান সময়ে আমরা ইটের বাড়ি না করে আদিকালের সেই মাটির বাড়ি তৈরি করেছি। এর কারণ মাটির বাড়িগুলো সহজেই লেপ দিয় সুন্দর করে তোলা যায়, যেভাবেই আমরা সাজাতে চাই সেভাবেই আমরা সাজাতে পারি। সেজন্য আমরা ঐতিহ্য হিসেবে মাটির বাড়ি এখনও ধরে রেখেছি। এছাড়াও ইটের বাড়িগুলোর তুলনায় মাটির বাড়িগুলো তেমন গরম হয় না, গরমেও বাড়ি শীতল থাকে। এ কারণে ইটের বাড়ির চেয়ে মাটির বাড়িতে বেশি আরাম।'
বিডি প্রতিদিন/ অন্তরা কবির