শান্তিনগর। বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরের একটি পাড়া বা মহল্লার নাম। ছয় নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত ওই পাড়াটিতে দুই শতাধিক পরিবারের বাস। কিন্তু তাদের চলাচলের সড়কে টিনের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে ‘অশান্তি’ সৃষ্টি করেছেন বোরহান উদ্দিন সুলতান নামের এক প্রভাবশালী। তার দাবি, এটি কোনো পৌরসভার সড়ক নয়। সড়কের জায়গা তার বাবার। তাই দখলে নিতে টিনের বেড়া দিয়েছেন।
এদিকে দুইদিন ধরে ওই সড়কটি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তি তৈরী হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যা যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শান্তিনগর মানুষের চলাচলের জন্য তৈরী করা হয়েছে ছয় ফুট প্রসস্ত সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি দিয়েই যাতায়াত করে আসছেন এই মহল্লার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের সুবিধার্থে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে পৌরসভার পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ইটের সোলিং করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) একই এলাকার মাহবুবার রহমানের ছেলে বোরহান উদ্দিন সুলতান মানুষের চলাচলের ওই সড়কটির মুখে টিনের বেড়া দেন। এতে করে চলাচল করতে পারছেন না পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকি চার থেকে পাঁচটি পরিবার প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
এসময় কথা হয় ওই মহল্লার প্রধান মুনসী সাইফুল বারী ডাবলুর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় তিন যুগ আগে (ছত্রিশ বছর) এই সড়কটি নির্মিত হয়। এরপর থেকে এলাকার সবাই সড়কটি ব্যবহার করে আসছেন। নির্বিঘ্নেই চলাচল করছেন তাঁরা। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মানুষের চলাচলের সড়কের মুখে টিনের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এহেন কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। আব্দুল হাকিম, মোমিনুল ইসলামসহ একাধিক বাসিন্দা বলেন, তাদের চলাচলের সড়ক বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি জায়গাও দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বোরহান উদ্দিন সুলতান নামের ওই ব্যক্তি। বিষয়টি তারা পৌরসভার মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন।
পরে পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধসহ সড়কে টিনের বেড়া অপসারণের নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। পৌর কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙলি দেখিয়ে প্রভাবশালী বোরহান উদ্দীন সুলতান অদ্যবধি টিনের বেড়া অপসারণ করেননি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বোরহান উদ্দীন সুলতান বলেন, ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জায়গায় তিনি বাড়ি নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এখানে পৌরসভার কোনো সড়ক নেই। সব তাদের বাপ-চাচাদের ব্যক্তিগত জায়গা। তাই সড়কের জায়গা দখলে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না বলে দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা বলেন, তার নবগঠিত পরিষদ কোনো নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। তবে মানুষ চলাচল করে-এমন কোনো সড়ক বন্ধ করে দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনী। আর পৌরসভার সড়ক বন্ধ করে দেওয়ার তো কোনো সুযোগই নেই। শান্তিনগর মহল্লার ওই সড়কটি টিনের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাটি জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেখানে পাঠিয়ে সড়কের বেড়া অপসারণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ অমান্য করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল