কুমিল্লায় স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপককে গ্রেফতার করেছে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতার শিক্ষকের নাম ইফতেখার আহম্মেদ রানা। তিনি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ ফ্যাকাল্টির সহকারী অধ্যাপক।
কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স খালের পাড়ের ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে কোতয়ালী থানা পুলিশ। আদালত তাকে জেলখানায় পাঠান। ইফতেখার আহম্মেদ রানা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পয়াত গ্রামের মো. আবদুস সাত্তারের ছেলে।
আদালতে করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বরে পারিবারিকভাবে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার উত্তর দুর্গাপুরের গোমতী হাউজিং এলাকার কামাল হোসেনের অনার্স পড়ুয়া মেয়ের সাথে বিয়ে হয় ইফতেখার আহম্মেদ রানার। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা। যৌতুক না পেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয় তার ওপর।
পরবর্তীতে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকার যৌতুক দাবি করা হয় মেয়ের বাবার কাছে। টাকা না পেয়ে গত বছরের ৩১ জুলাই রেসকোর্সের ভাড়া বাসায় নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। পালিয়ে বাবার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। এ বছরের ৩০ জানুয়ারি বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা করার জন্য বসে দুই পরিবার। ১৫ লাখ টাকা না দিলে মেয়েকে নিয়ে সংসার না করার কথা জানান আহম্মেদ রানা। সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়ে ভুক্তভোগী এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।
কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মহিউদ্দিন শেখ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোনায় সহকারী অধ্যাপক ইফতেখার আহম্মেদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
মেয়ের বাবা কামাল হোসেন জানান, বিয়ের কিছুদিন পরই ছেলে ও তার পরিবার আমার মেয়ের ওপর যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু করে। ফ্ল্যাট কেনার নামে আমাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। আমি অপারগতা প্রকাশ করার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মেয়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করি আমরা।
এ বিষয়ে ওই শিক্ষকের পরিবারের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার চাচি জাহানারা বেগম বলেন, ‘ছেলেটা ভালো। বউ তাকে চক্রান্ত করে ফাঁসিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’
আর চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়ন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ ফ্যাকাল্টির প্রধান প্রফেসর আবদুল আহাদ বলেন, ইফতেখার আহম্মেদ রানা সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার আচরণ ভালো বলে জানি। নারী নির্যাতনের মামলায় পুলিশ রানাকে গ্রেফতার করেছে শুনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ