২৯ জুলাই, ২০২১ ২০:৪৫

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত; ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি


টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত; ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি

দুই দিনের টানা ভারি ভর্ষণে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য ছোট-বড় মৎস্য ঘের ও পুকুর। তলিয়ে আছে সদ্য রোপা আমন, বীজতলা ও ফসলি জমি। উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরের কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়াসহ বিভিন্ন নদ ও নদীর বেড়ি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। টানা এই বৃষ্টির কারণে বিশেষ করে সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নিম্না ল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে মৌসুমী বৃষ্টির কারনে প্লাবিত হয়ে আছে জেলার নিন্মাঞ্চল। 

সাতক্ষীরার সদর উপজেলার, মধুমল্লারডাঙ্গি, কামালনগর, মাছখোলা, ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া কয়েক হাজার মাছের ঘের, পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে এই বৃষ্টিপাতে কি পরিমান মৎস্য ঘের ও ফসলসহ কৃষির ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তা এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান দিতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস ও সাতক্ষীরা খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। 

এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার পানি নিষ্কাশন সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, কামাননগর, পুরাতন রাজারবাগান, বদ্দিপাড়া কলোনি, ঘুড্ডির ডাঙি, পুরাতন সাতক্ষীরা, কাটিয়া মাঠপাড়া, মাছখোলা, ডায়েরবিল, রথখোলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসীরা জলাবদ্ধতায় নাকাল হচ্ছে বছরের পর বছর।

কলারোয়ার খোরদো এলাকার আইয়ুব হোসেন জানান, বেত্রবতী ও কপোক্ষাক্ষ নদীর উভয় পাশের বিল ও গ্রামগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটার ভারসা গ্রামের লিটন জানান, কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রাম ও বিল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের ও কোটি কোটি টাকার মাছ। অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এসব এলাকার বিলগুলোতে সদ্য রোপা আপন ও বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। 

এদিকে উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনির প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, বড়দল, শ্রীউলা, আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্না ল পানিতে থৈ থৈ করছে। নদীর বাঁধগুলো ঝুকিতে রয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালি, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা, মথুরেশপুর, ভাড়াশিমলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। 
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরর তথ্য কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ভারি বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রোপা আমন, আউশ বীজতলা তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপন করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। 

সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাছেদ জানান, ভারি বর্ষণে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অতি বর্ষণজনিত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনে এখনো পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পাননি তারা। 

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর