২১ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:০৮
সাফল্য পেয়েছে মৌ-খামারি মোসাদ্দেক

সম্ভাবনাময় বরই বাগানে মধু আহরণ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

সম্ভাবনাময় বরই বাগানে মধু আহরণ

বরই বাগানে মধু আহরণ।

বরই বাগান থেকে মধু সংগ্রহ করে তাক লাগিয়েছেন মৌ-খামারি মোসাদ্দেক হোসেন। দুই হাজার গাছের বরই বাগানে ৬০টি মৌ-বাক্স থেকে ১০০ কেজি বরই ফুলের মধু আশা করছেন, যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৮০০ টাকা।

দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় অনেক বরই বাগানে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করছেন চাষিরা। এসব বরই বাগানে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবর জুড়ে বর্ষা পরবর্তী শরৎ মৌসুমে অসংখ্য ফুল আসে। আধুনিকতার সঙ্গে মৌচাষেও এসেছে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা।

অ্যাপিস ম্যালিফেরা প্রজাতির মৌমাছিকে বাক্সে পালন করে মৌ-পালন করছেন আধুনিক মৌ-খামারিরা। তেমনই একজন মৌ-পালক মোসাদ্দেক হোসেন। বছরে মধু উৎপাদন করেন প্রায় ৩ টন। সরিষা, লিচু, কালোজিরা, মিষ্টি কুমড়া, খলিশা থেকে মধু আহরণ করলেও এবার তিনি মধু উৎপাদনের জন্যে বরই বাগানে বসিয়েছেন মৌ-বাক্স।

দিনাজপুর সদরের উত্তর শিবপুর এবং রাণিগঞ্জ হাট এলাকায় চাষি আনিসুর রহমানের দুই হাজার গাছের বরই বাগানে মৌ-বাক্স বসিয়ে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। অতীতে মৌ-খামারির মৌমাছিরা বরই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে না পারলেও তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং উদ্ভিদতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে বরই ফুলের মধু পেয়েছেন। বরই ফুল থেকে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে ফুলে ফুলে পরাগায়ন হয় এবং শতকরা ২০-৩০ ভাগ বেশি ফলনও হয়। একদিকে মধু সংগ্রহ করে লাভবান অন্যদিকে মৌমাছির মাধ্যমে ফুলে ফুলে পরাগায়ন ঘটায় বরই বাগানের ভাল ফলনের আশা। তাই বরই বাগানের চাষি ও মৌ-চাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

উদ্ভিদবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করা মৌ-খামারি মোসাদ্দেক হোসেন জানান, সাধারণত অ্যাপিস ম্যালিফেরা বরই ফুলের নেক্টার সংগ্রহ করে না। কিন্তু আমি বরই ফুলের পাতা ও ফুলের নির্যাস করে তাদের ফিডিং দিয়ে অভ্যাস করিয়েছি। তারা সে ঘ্রাণের প্রতি অভ্যস্ত হওয়ায় মৌ-বাক্স স্থাপনের পর মৌমাছিরা ফুল থেকে নেক্টার সংগ্রহ করছে। ফলে বরই বাগানে পরাগায়ন বাড়ায় উৎপাদন আশানুরূপ।

মৌ-পালক মোসাদ্দেক হোসেন আরও জানান, মধু উৎপাদিত হওয়ার জন্য খামার প্রায় প্রস্তুত। ৬০টি মৌ-বাক্স থেকে ১০০ কেজি বরই ফুলের মধু আশা করছেন তিনি।

উদ্ভিদতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি জানান, বাউ ও আপেল কুল বা কাস্মেরী বরই ফুলে নেক্টার কম থাকায় মৌমাছি খুব বেশি নেক্টার পায় না। কিন্তু সিডল্যাস বরই জাতে প্রচুর নেক্টার থাকায় বাগানটি থেকে প্রায় তিন মণ মধু হবে আশা করছি। বরই বাগানে মৌমাছি নিয়ে যাওয়ায় আমার বর্ষা পরবর্তী খামার ব্যবস্থাপনায় খরচ বেঁচেছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আবার ১০০ কেজি মধু প্রাপ্তির প্রত্যাশা করছি, যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। 

মৌ-পালন কর্মসূচি বিসিক দিনাজপুরের মৌ-পালন কারিগরি কর্মকর্তা রুহুল আমীন জানান, মোসাদ্দেকের মৌ-খামার পরিদর্শন করেছি। তার খামারে প্রচুর বরই মধু সঞ্চয় করেছে। তার খামার বর্ষা পরবর্তী প্রাকৃতিক খাদ্য পাওয়ায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় দ্রুত নতুন নতুন কৌশল তৈরি করে মৌ-পালনে সাফল্য অর্জন করেছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর