ধানের জেলা দিনাজপুরের ফসলের মাঠ সবুজে ভরে উঠেছে। ফসলের মাঠে কোথাও আমন ধানের সোনালী শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। কৃষকদের কেউ ধানের আগাছা পরিস্কার করছেন আবার কেউ সার ও কীটনাশক স্প্রে করছেন। ফসলের মাঠ কোথাও ফাঁকা নেই, যতদূর দৃষ্টি পড়ে সবুজ আর সবুজ, নীল আকাশের সাদা মেঘের ঢেলা, যেন সবুজের গাঢ় রঙ্গে একাকার হয়ে পড়েছে। নতুন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি। যেন ধানের সবুজ পাতা বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।
ব্রি ধান-৩৪ (বাদশা ভোগ), কাঠারিভোগ, ব্রি ধান- ৫১, ৫২, ৫৭ ও ৮০ জাতের ধান ও স্বর্ণা এবং নেপালি স্বর্ণাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আমন ধান চাষ হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে আশানারুপ ফলন হবে আশা কৃষি বিভাগের।
এদিকে, দিনাজপুরের খানসামা, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুরসহ কয়েক উপজেলায় আমন ধানে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখা দিয়েছে পাতা মোড়ানো মাজরা ও পচানি রোগ। এতে ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা। ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রত্যেক ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে কারেন্ট পোকা, মাজরা পোকা, গোড়াপোচা ও ব্লাস্ট রোগসহ বিভিন্ন রোগ ও পোকা দমনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, চিন্তার কারণ নেই। নিয়ন্ত্রণে রায়েছে এ রোগ। এরই মধ্যে পোকা দমনে আলোক ফাঁদ, পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কৃষকদের উৎসাহিত করছে কৃষিবিভাগ। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন ব্লকে আলোক ফাঁদ স্থাপন করে পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন স্থানে ভিডিও শো করে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও দমন পদ্ধতি নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
দিনাজপুর সদরের সুন্দরবন ইউপির তরঙ্গীনি গ্রামের আদর্শ কৃষক আলহাজ্ব দবিরুল ইসলাম, নশিপুরের কৃষক পিয্যুষ রায়, ফাজিলপুরের কৃষক দবির উদ্দীন, আস্করপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম, শশরা ইউপির কৃষক মোঃ আবুল হোসেন ও ঝানজিরার কৃষানী ছালেহা খাতুন জানান, তারা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিকেল বেলা কিটনাশক স্প্রে এবং পার্চিং করে (গাছের ডাল পুতে পাঁখি বসার ব্যবস্থা করে) ভালো ফলাফল পেয়েছেন। ইউরিয়া, পটাস, ফসফেট, ডিএপি সার পরিমিত প্রয়োগ করেও ভালো ফল পাওয়া গেছে বলে জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, এবার আমন ধান ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর প্রতি হেক্টরে গড়ে ৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি জমি চাষ হয়েছে বীরগঞ্জ উপজেলায় ২৯ হাজার ৬ শত হেক্টর জমিতে। এই ধান চলতি কার্তিক মাসেই কাটাই মাড়াই শুরু হচ্ছে। তবে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে।
দিনাজপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, জলবায়ু অনুকূল থাকায় আমন মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হবে। তাছাড়া ধান ক্ষেতে এবার রোগবালাই কম। কৃষকের খরচ কম পড়বে। এবারও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষকরাও ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম