মেয়াদের প্রায় ৪৫ মাস বছর পর গঠন করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে এ কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন সাম্প্রদায়িক হামলা মামলা, মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামিরাও। বিষয়টি নিয়ে জেলা জুড়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পর ১১ ফেব্রুয়ারী রবিউল হোসেন রুবেলকে সভাপতি ও শাহাদাৎ হোসেন শোভনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছর মেয়াদী ওই কমিটির মেয়াদের প্রায় ৪৫ মাস পর গত ৩০ অক্টোবর ৩৪৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয়েছে ৯০ জনকে। আর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন ১১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১১ জন, অন্যান্য সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন ১৩৬ জন এবং সহ-সম্পাদক ৫৯ জন ও সদস্য পদ পেয়েছেন ৪০ জন।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০’র ‘ক’ ধারায় বলা আছে, জেলা কমিটি ১৫১ সদস্যের নির্বাহী সাংসদ গঠিত হবে। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে ৩৪৯ সদস্য বিশিষ্ট।
অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে বিভিন্ন মামলার আসামি, বিবাহিত ও অছাত্রদের পদ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া উবায়দুর রহমান বাবু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম অন্তু গত বছরের ১১ এপ্রিল আখাউড়া থানা পুলিশের হাতে মাদকসহ গ্রেফতার হন। একই বছরের ৩১ আগস্ট ওই মাদক মামলার দাখিলকৃত চার্টশিটেও তাদের নাম রয়েছে।
এছাড়া গত ২০১৬ সালের অক্টোবরে নারিনগরের আলোচিত সাম্প্রদায়িক হামলার মামলার আসামি ফারদিন তাহের রাহুল পেয়েছেন উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক পদ। মামলায় গ্রেফতারও হয়েছিলেন রাহুল। পরবর্তীতে জামিনে কারামুক্ত হয়ে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। গত মাস দুয়েক আগে দেশে ফিরেন রাহুল। এছাড়া ২০১৮সালের জুন মাসে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার হওয়া রবিউল আলমকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। বিবাহিত মেহেদী মিশু পেয়েছেন পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের চা বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম উজ্জল পেয়েছেন উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। শয়ন আহমেদ শিখনকে সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। এই যুবক শহরের পীরবাড়ি এলাকার একটি জুতার কারখানায় কারিগর হিসেবে কাজ করেন। মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রলীগের একটি অংশ এই বিতর্কিত কমিটি সংশোধনের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা আগামী সাত দিনের মধ্যে এই কমিটি সংশোধনের দাবি জানান। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অন্তত দুই শতাধিক লোককে স্থান দেয়া হয়েছে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান পারভেজ বলেন, কোন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আর বাদ দেওয়া হয়নি। বিবাহিত, অছাত্র, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসহ বিভিন্ন মামলার আসামি প্রায় ১০০ জন এই কমিটিতে পদ পেয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর কিছু অভিযোগ আমরা জানতে পেরেছি। তাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন