আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী এক স্বতন্ত্র প্রার্থী আপিল আবেদন জমা দিতে যাওয়ার পথে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশি তৎপরতা ও সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করায় প্রায় দুই ঘন্টা পর ‘অপহরণকারীরা’ ওই প্রার্থীকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ওই প্রার্থীকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা দিয়ে আপিল আবেদন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহরের পাওয়ার হাউজ মোড় (পিডিবি) এলাকায় এ অপহরণের ঘটনা ঘটে।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী ওই প্রার্থীর নাম আব্দুল হক ব্যাপারী। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
ভুক্তভোগী আব্দুল হক ব্যাপারী জানান, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্দেশে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তার জেলা পরিষদের সদস্য পদ হতে অব্যাহতিপত্র নিয়ে আসতে বাধা দেওয়া হয়। এতে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে তিনি কর্তৃপক্ষকে ঘটনা অবহিত করলে কর্তৃপক্ষ তাকে আপিল করার পরামর্শ দেয়। রবিবার তিনি আপিল আবেদন জমা দেওয়া উদ্দেশে কাঁঠালবাড়ী থেকে অটোরিকসা যোগে জেলা শহরে আসার পথে শহরের পাওয়ার হাউজ মোড় (পিডিবি) এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল নিয়ে তার পথ রোধ করে তাকে নির্বাচন অফিসে যেতে বারণ করে। তারা তাকে তাদের সাথে যেতে জবরদস্তি করলে তিনি মোটরসাইকেলে উঠতে অস্বীকৃতি জানান।
এ সময় তিন চারজন ‘অপহরণকারী’ অটোরিকসায় উঠে তাকে চেপে বসে এবং অটোরিকসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১০/১২ টি মোটরসাইকেল অটোরিকসাটি অনুসরণ করতে থাকে। তার মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে সদর উপজেলা পরিষদের পেছন দিয়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে বেলগাছা ইউনিয়নে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোমধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়লে আব্দুল হক ব্যাপারীর সমর্থকরা কাঁঠালবাড়ী বাজারে কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। শুরু হয় পুলিশি তৎপরতা। অপহরণকারীদের নিকট এ খবর পৌঁছালে তারা আব্দুল হক ব্যাপারীকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আব্দুল হক ব্যাপারীকে উদ্ধার করে।
আব্দুল হক ব্যাপারী আরো বলেন, অপহরণকারীদের অনেককেই আমি চিনতে পেরেছি। তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই তাদের এই হীন চেষ্টা। আমি এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমন কাজ করতে পারে না বলে দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। অভিযুক্তরা কারও ব্যক্তিগত ক্যাডার বাহিনী হতে পারে বলে মনে করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধার দল। এই দলের নেতাকর্মীরা একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অপহরণের মতো হীন কাজ করতে পারে না। এটা কারও ব্যক্তিগত বাহিনীর কাজ কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখা প্রয়োজন।
ওসি খান মো. শাহরিয়ার জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নসহ সার্বিক বিষয়ে পুলিশ বিশেষ নজরদারি রেখেছে।
আপিল কর্তৃপক্ষ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, আব্দুল হক ব্যাপারী আপিল আবেদন জমা দিয়েছেন। যাচাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ