মৌলভীবাজারের হাওর অঞ্চলের মানুষের একমাত্র সম্পদ হাওরে উৎপাদিত বোরো চাষাবাদ। এখানকার মানুষ নির্ভরশীল হাওরের বোরো ধানের উপর। তাদের পুরো বছরের খোরাকি এবং সকল ব্যয় চলে ধান বিক্রি করে। কৃষকরা ধারদেনাও মিটায় ধান বিক্রির টাকা দিয়ে।
তবে এ বছর বোরো মৌসুমে দীর্ঘ মেয়াদি খরা ও পানি সেচের সুবিধা না থাকায় জেলার হওর গুলোতে কৃষকের রোপনকৃত ব্রি-২৮ জাতের ধানে চিটা ধরায় লোকসানে পড়েছেন হাওর পারের কয়েক হাজার প্রান্তিক ও বর্গা চাষীরা। কোথায়ও পুরো জমির ধানে চিটা ধরায় কাটার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
হাওর পারের কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায়, হাওরের নিচু এলাকার সব জমিতে ক্ষেত হয় বিহার-২৮ জাতীয় ধান। এই খরার প্রভাব শুধু ব্রি-২৮ জাতীয় ধানে পড়েনাই এর প্রভাবও পড়েছে হাওরের উপরের অংশের ব্রি-২৯ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের উপড়। এদিকে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে। কিন্তু মাঠে কৃষকের কান্নায় দিন কাটছে।
গত বছর হাওরের যে এলাকায় (মৌজায়) ব্রি-২৮ জাতীয় ধান প্রতি বিঘাতে ১৫ থেকে ২০ (মন ধান) পেয়েছেন কৃষকরা। এ বছর দীর্ঘ মেয়াদী খরায় ধানে চিটা ধরার কারণে ওই এলাকায় (মৌজায়) ব্রি-২৮ ধান প্রতি বিঘাতে কৃষকরা পাচ্ছেন ৪ থেকে ৫ মণ।
জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৮০০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৫৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি-২৮ জাতীয় আগাম ধান চাষবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে।
হাওর কাউয়াদীঘির পূর্ব পারের পশ্চিম ভাগ গ্রামের জয়নাল মিয়া বলেন, ধানে চিটা ধরার কারণে আমরা অনেক লোকসানে পড়েছি। গত বছর ২ বিঘা জমিতে ৪০ মণ ধান পেয়েছিলাম। এবার ১০ মণ ধান পেতে পারি। একই এলাকার খায়রুল, শহিদ মিয়া, সাদিকসহ অনেকে বলেন, এ বছর খরার কারণে পানির অভাবে আমাদের জমিতে ধানে চিটা ধরে অনেক জমির ধান কাটার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার যে সকল জমিতে ধান হয়েছে তার উৎপাদন অনেক কম। এই হাওরের ছালিক মিয়া বলেন, সময় মতো বৃষ্টি না হওয়াতে এবং নদী, খালে পানি না থাকায় জমিতে পানি দিতে পারিনা তাই আমার ১৮বিগা ব্রি-২৯ জাতের ধানি জমি নষ্ট হয়েছে।
হাকালুকি হাওর পারের ভুকশিমইল ইউনিয়নের কৃষক মোঃ ইদই মিয়া, কাদির মিয়া, গিয়াস উদ্দীন সহ অনেকেই বলেন, খরার কারণে এ বছর হাওরে ব্রি-২৮ জাতীয় ধান চিটা ধরেছে। পানির অভাবে অর্ধেক ধানে চিটা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। বোরো চাষাবাদ করে এবার বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, খরার কারণে কিছু কিছু এলাকায় জমিতে ধানে চিটা ধরেছে, এটা আমাদের চোখে পড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম