বগুড়া জেলা নদী দিয়ে ঘেরা থাকলেও এই জেলায় নেই কোনো ডুুবুরি দল। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। নদীতে, পুকুরে, বিলের পানিতে পড়ে কেউ নিখোঁজ হলে রাজশাহী থেকে ডুবুরি দল নিয়ে আসতে হচ্ছে। রাজশাহী থেকে ডুবুরি দল বগুড়ায় আসতে যেমন সময় লাগছে, ঠিক তেমনি আবার পানিতে নিখোঁজ ব্যক্তিও হয়ে যাচ্ছে সলিল সমাধি। বগুড়াবাসী এ কারণে জেলায় ডুবুরি দল পাওয়ার দাবি তুলেছে।
বগুড়া জেলা দিয়ে যমুনা নদী, বাঙালি নদী, করতোয়া নদী, ইছামতী নদী, সুখদহ নদী, নুরইলের বিল, নাগর নদ, ভদ্রাবতী নদী, জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলায় চলনবিলের অংশ বিশেষসহ জেলায় পুকুর রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এসব নদ-নদীতে ও পুকুরে প্রায় শিশু, নারী পুরুষের মৃত্যুর সংবাদ আসছে। এই নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে যমুনা, বাঙালি এবং ইছামতী নদীতে। এই নদীগুলো জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং ধনুট উপজেলায় বহমান রয়েছে। এইসব নদীর পানিতে পড়ে নানা সময়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিখোঁজ হন শিশু হতে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত।
নদীতে ডুবে যাওয়াদের খুঁজতে এ জেলায় কোনো ডুবুরি দল নেই। দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের খুঁজতে বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ডুবুরিদল নিয়ে আসতে হয়। এক্ষেত্রে রাজশাহী হতে ডুবুরিদল পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। ফলে ঘটনার পরদিন হতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে কাজ শুরু করেন ডুবুরিদল। এতে প্রবল স্রোতে কোনো কোনো মরদেহ ঘটনাস্থল হতে অন্যত্র চলে যাওয়ায় তাদের আর উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। নিখোঁজের পরের দিন বা তারও ২ থেকে ৩ দিন পর রাজশাহী ডুবুরি দল এসে মরদেহ উদ্ধার করেছে। অথচ বগুড়ায় ডুবুরি দল থাকলে সেই উদ্ধার অভিযান আরও দ্রুত হতো।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ম্যান সানোয়ার হোসেন জানান, যমুনা এবং বাঙালি নদীতে ২০১৯ সালে ৯ জন নিখোঁজ হয়, তাদের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২০ সালে ১০ জন নিখোঁজ হয়, তাদের মধ্যে ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২১ সালে ৭ জন নিখোঁজ হয়, তাদের মধ্যে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২২ সালে এ পর্যন্ত ৩ জন নিখোঁজ হয় এবং তিনজনেরই মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। বাকিদের মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। নিখোঁজের খবরে বগুড়ায় কোনো ডুবুরি দল না থাকায় রাজশাহীর ডুবুরি দল এসে কাজ করে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি ফায়ার সার্ভিসের লিডার ময়েজ উদ্দিন জানান, দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমরা নদী থেকে ২৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। কাছাকাছি কোনো ডুবুরিদল থাকলে অতি দ্রুত পানিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।
বগুড়ার ধুনট ফায়ার সার্ভিসের লিডার হামিদুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে বাঙালি নদীতে ২ জন এবং ইছামতী নদীতে ১ জন নিখোঁজ হয়েছিল। যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২০ সালে বাঙালি নদীতে ১ জন এবং ইছামতী নদীতে ২ জন নিখোঁজ হয়েছিল। যাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ২০২১ সালে যমুনা নদীতে ১ জন নিখোঁজ হয়, যাকে কয়েকদিন উদ্ধার অভিযান চালিয়েও উদ্ধার করা যায়নি। তবে আমাদের কাছাকাছি কোনো ডুবুরিদল একান্ত প্রয়োজন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের তারা শেখ বলেন, যমুনা নদীতে পড়ে যাওয়া মোবাইল ফোন খুঁজতে নেমে তার ছেলে তোজাম্মেল শেখ নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পরদিন সারিয়াকান্দি ফায়ার সার্ভিস আসে। তার পরের দিন ডুবুরিদল খোঁজাখুঁজি শুরু করে। কাছাকাছি ডুবুরিদল থাকলে এই সমস্যা হতো না।
সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান মতি জানান, নদীতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজতে রাজশাহীর ডুবুরিদলকে কল করতে হয়। যারা শত মাইলের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে আমাদের এলাকায় আসে। ততক্ষণে মরদেহের স্থানচ্যুতি ঘটে। আমাদের জেলায় কোনো ডুবুরিদল নেই। এ জেলায় ডুবুরিদল এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। ডুবুরি দল থাকলে অনেকের প্রাণ বাঁচানো যাবে বলে মনে করি।
বগুড়ার-১ (সারিয়াকান্দি -সোনাতলা) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান জানান, আমাদের এলাকায় ডুবুরিদল থাকা এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই