কুষ্টিয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামনেই প্রকাশ্যে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত শিক্ষার্থী আবির হাসান শহরের কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আজ সোমবার দুপুরে ওই স্কুলের বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত আবিরকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের এক নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাসা জিলা স্কুলের সামনেই মজমপুর ঝাউতলা এলাকায়। তার পিতার মোহাম্মদ শাহজাদা ওরফে গয়া পেশায় গাড়ি চালক।
কলকাকলি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা জানান,পরীক্ষা শেষে ছেলে-মেয়েরা বাড়ি ফিরছিল। আবিরের ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা ছিল। সেও পরীক্ষা শেষ করে বাড়ির দিকে রওনা হয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় জিলা স্কুলের একদল শিক্ষার্থী লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কলকাকলি স্কুলে ঢুকে পড়ে। তাদের দেখে ভয়ে দৌড় দিয়ে আবির স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নেয়। সেখানে তাকে ক্ষুর দিয়ে ডান পায়ের রানে আঘাত করা হয়। এতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়, মাংস কেটে পড়ে যায়। প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় শিক্ষার্থীরা। পরে তারা দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।
প্রধান শিক্ষক জেবুননেসা সবুজ বলেন, ‘মজমপুর এলাকার বাসিন্দা জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভলিবল খেলোয়াড় সংগ্রামের নেতৃত্বে ছেলেরা এসে হামলা করে। আমার ছেলেকে তার ক্ষুর মেরে গুরুতর আহত করেছে। তারা আমার স্কুলের দুটি ভবনের সব জানাল ভেঙে দিয়ে গেছে। তাদের সাথে জেলা স্কুলের শাহরিয়ার ফেরদৌস, ইশতিয়াক আহমেদ, স্বাধীন, আওয়াল, জুয়েল ইসলাম, তুহিন আহমেদ, হৃদয় হোসেন ইমন খান রাব্বিসহ অনেকেই অংশ নেয়। আমরা মামলা দায়ের করব থানায়।’
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আবিরের পায়ে গভীর ক্ষত। তাকে তার বন্ধুরা স্ট্রেচারে করে ১ নম্বর ওয়ার্ডে বারান্দায় নিয়ে যাচ্ছে। আবির জানান, তিনি একজনকে চেনেন, জিলা স্কুলে পড়ে। বাকিদের তিনি চেনেন না। তার সাথে কারো কোন ঝামেলা হয়নি বলে জানান।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেহেদী হাসান বলেন, ‘ক্ষুর ধারালো হওয়ায় গভীর ক্ষত হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রচুর রক্তের প্রয়োজন।’
আবিরের পিতা মোহাম্মদ শাহাজাদা বলেন, ‘মজমপুরের সংগ্রামের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। তারা বিএসবি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আমার ছেলেতো নিরীহ। তাকে কেন মারা হলো। এ ঘটনায় আমি বিচার চাই।’
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, তিন দিন আগে কলকাকলি স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী প্রদীপকে মারপিট করে জিলা স্কুলের এই শিক্ষার্থীরা। পুলিশ লাইনের এক শিক্ষার্থীদের মারধর করে কলকাকলি স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পুলিশ লাইনের সেই শিক্ষার্থীর কয়েকজন বন্ধু জেলা স্কুলে পড়ে। সেই প্রতিশোধ নিতেই জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে হামলা করে। প্রেম সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা চলছে। জিলা স্কুল ও কলকাকলি স্কুলের প্রাচীর একই সাথে। জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রাচীর বেঁয়ে উঠে কলকাকলি স্কুলে প্রবেশ করে সেখানকার মেয়েদের প্রায়ই উক্ত্যক্ত করে বলে অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।
ঘটনার পরপরই কলকাকলি স্কুলে আসেন কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মাদ সাব্বিরুল আলম। তিনি বলেন, জিলা স্কুলের ছেলেরা দলবল নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে স্কুলে। একজন ছাত্রকে তারা ক্ষুর মেরেছে। পাশাপাশি ভাংচুর করেছে। কারা কারা জড়িত তাদের নাম পাওয়া গেছে। মামলা হলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এফতে খাইরুল ইসলাম বলেন,‘সকালে ছেলেরা উত্তেজিত হয়। আমি তাদের ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করি। তারা আমার কথা না শুনে পুলিশের সামনেই কলকাকলি স্কুলে গিয়ে এক ছাত্রকে ক্ষুর মেরেছে। স্কুলে ভাংচুর চালিয়েছে। এটা লজ্জাজনক। আমার স্কুলের এক ছাত্রের কাছ থেকে ড্যাগার উদ্ধার হয়েছে। যারা জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল