বগুড়ার শেরপুরে আমনের ভরা মৌসুমে সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে ইউরিয়া সার। তাই পর্যাপ্ত সার মজুদ থাকার পরও কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। কৃত্রিমভাবে সারের সংকট দেখাচ্ছে সারের ডিলাররা। সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে হঠাৎ করেই খোলা বাজারে সার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন ডিলাররা। সেই সঙ্গে তাদের নিয়োগ করা সাব-ডিলার ও ব্যবসায়ীরাও সার না পাওয়ার কথা বলে বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। ফলে শেরপুর উপজেলার কৃষকদের মধ্যে সারের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। সার পেতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। ডিলারের দোকানে সাত-আট ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার পাচ্ছেন না। কিন্তু বেশি দাম দিলে ঠিকই মিলছে সার।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, শেরপুর উপজেলায় বিসিআইসি অনুমোদিত সারের ডিলার রয়েছেন ১২জন। আর বিআরডিসির ডিলার রয়েছেন ২১ জন। এছাড়া শতাধিক খুচরা সার ব্যবসায়ী রয়েছেন। কৃষি নির্ভর এই উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণও হয়েছে। এসব জমিতে ইউরিয়া সার দেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। তাই চলতি আগস্ট মাসে ৯০৭ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ডিলাররা সার উত্তোলন করে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছেন।
শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী গ্রামের কৃষক মাহবুবার রহমান বলেন, এবার দশবিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। চারা লাগানোর পর বিশদিন পার হতে চলেছে। এখন সার দেওয়ার উপযুক্ত সময়। কিন্তু সার পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলার ও কৃষি অফিসের স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। সার নাই বলে তাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।
রমজান আলী নামের আরেক কৃষক জানান, সারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছি। ডিলারের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষার পর মাত্র এক বস্তা সার পেয়েছি। যা দিয়ে আমার কোনো কাজই হবে না। কারণ আমার প্রয়োজন সাত বস্তা। তাই বাড়তি দাম দিয়ে সরকার নির্ধারিত প্রতি বস্তা সার ১১০০ টাকার স্থলে ১৪০০ টাকা দিয়ে কিনেছি।
উচরং গ্রামের কৃষক শাফি উদ্দিন বলেন, ডিলার-ব্যবসায়ীদের কাছে সার কিনতে গেলে পাচ্ছি না। আবার সরকার নির্ধারিত দামেও বিক্রি করা হচ্ছে না। আবার বেশি টাকা দিলেই সার পাওয়া যাচ্ছে। এক কথায় আমরা সার সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে গেছি। তাই আমনের ভরা মৌসুমে বেশি দামে ইউরিয়া সার কিনতে হচ্ছে। তিনিও বাড়তি দাম দিয়ে প্রতিবস্তা ইউরিয়া সার ১৩০০ টাকায় কিনেছেন বলে দাবি করেন।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, সারের কোনো সংকট নেই। কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ডিলাররা সেই সার উত্তোলন করে বিক্রি করলেও সেটি আমার দপ্তর থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। এরপরও সার পেতে কোথাও কোনো সমস্যা হলে সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন। সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে অতিরিক্ত টাকায় সার বিক্রির সুযোগ নেই। যদি কোনো ডিলার-ব্যবসায়ী বেশি দাম নিয়ে থাকেন, তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর