যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাঠি ইউনিয়নে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর কবীর লিটন। মারপিটের এই ভিডিও গত দুদিন ধরে যশোর অঞ্চলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হারিদাসকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় মারপিটের এ ঘটনা ঘটে। আর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা হয় ওইদিন সন্ধ্যায়।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকালে গ্রাম পুলিশ ওয়াজেদ আলী ও রমেশ বিশ্বাস কাটাখালী গ্রামের আমজাদ হোসেনের মোল্যার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবুকে (২৪) ইউনিয়ন পরিষদে ধরে নিয়ে যান। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর কবীর লিটন বাঁশের লাঠি দিয়ে বাবুকে বেধড়ক পেটান। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা জুয়েল হাসান বলেন, বাবু মোটরসাইকেল চালানোর সময় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। এ সময় তার মোটরসাইকেল থেকে বিকট শব্দ হতে থাকে। শুধু এ অপরাধে বাবুকে পরিষদে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন চেয়ারম্যান। খবর পেয়ে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখেন, একটি ঘরে আটকে রেখে সেলাইরেঞ্জ দিয়ে বাবুকে পেটানো হচ্ছে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তিনিও লাঞ্ছিত হন।
হরিদাসকাঠি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সবুজ বিশ্বাস জানান, বাবু ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী। মোটরসাইকেলে শব্দ হওয়ায় বাবুকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে বাবু নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আলমগীর কবীর লিটন জয়ী হন। নৌকা প্রতীকের পক্ষে থাকার কারণেই বাবুর ওপর এ নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে মনে করছেন সবুজ বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন লিটন বলেন, ‘আব্দুল্লাহ আল মামুন এলাকায় পালসার বাবু নামে পরিচিত। সে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার। সে কম্পিউটারে এলাকার ছাত্রদের সাথে বিভিন্ন মেয়ের ছবি লাগিয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে। মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদের সামনের মাঠে স্কুলছাত্রীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছিল।
এ সময় সে তার মোটরসাইকেলে সাইলেন্সার খুলে বিকট শব্দ করে মোটরসাইকেলটি মেয়েদের মধ্যে নিয়ে ফেলে দেয়। এতে মেয়েরা আতংকিত হয়ে ছুটাছুটি করতে শুরু করে। স্থানীয় শত শত মানুষ এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে চৌকিদার পাঠিয়ে বাবুকে ধরে এনে কিছুটা শাসন করি। আমি দুই-চারটা বাড়ি দিয়ে তাকে ভেতরে নিয়ে আটকে রাখি। না হলে শত শত মানুষের গণপিটুনির শিকার হতো সে। আমিও মানুষের আক্রোশ থেকে রক্ষা পেতাম না। ওকে বাঁচাতে, আর নিজেকে বাঁচাতেও ওকে দুয়েকটা বাড়ি দিয়ে ঘরের মধ্যে নিয়ে আসি’।
এ ব্যাপারে মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, পুরো বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। উল্লেখ্য, আলমগীর হোসেন লিটন হরিদাসকাঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় পরে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর