বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়ক দিয়ে ঢাকা-বরগুনা রুটের যাত্রীবাহী বাস চলাচলে বাধা, চাঁদা দাবির অভিযোগে আজ (১৯ সেপ্টেম্বর) বরগুনা জেলা সদরের সাথে অনির্দিষ্টকালের সময়ের জন্য দূরপাল্লার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে বরগুনা থেকে ঢাকাগামী ও ঢাকা থেকে বরগুনাগামী সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। দূরপাল্লার পরিবহন পরিচালনা কমিটির দাবি যাত্রীবাহী বাস চলাচল নির্বিঘ্নে করার পরে ধর্মঘট তুলে নেওয়া হবে।
সোমবার সকাল ৬টা থেকে এ দূরপাল্লার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। দূরপাল্লার পরিবহন পরিচালক কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বাস চলাচল নির্বিঘ্নে না করা পর্যন্ত এ ধর্মঘট অব্যহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, প্রায় দুই মাস ধরে বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়ক দিয়ে ঢাকা-বরগুনা রুটের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বাধা দিচ্ছে বরিশালের রুপাতলী বাস মালিক সমিতি। বাঁধার কারণে ঢাকা থেকে বাসগুলো পটুয়াখালীর সুবিদখালী ও আমতলী ফেরি পার হয়ে বরগুনায় চলাচল করতে হচ্ছে। এতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন- চার ঘণ্টার বেশি বাসে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছেন না বরগুনার সড়ক পথের যাত্রীরা। গত ২০ বছর ধরে এই সড়ক দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল করে আসছে। বরগুনা থেকে ফেরি ছাড়া ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র সহজ মাধ্যম এই সড়ক। এই সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের জন্য বিআরটিএর অনুমতি না থাকার অজুহাতে বরিশালের রূপাতলী বাসমালিক সমিতি নেতারা এই সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন এবং এই রুটে চলাচলকারী বাস চালক ও শ্রমিকদের উপর নির্যাতন করছেন ।
বাস শ্রমিক হানিফা ও ফোরকান বলেন, বরিশাল আটকে রেখে আমাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের বাস থামিয়ে রাখা হয়। চাঁদা দিয়ে তারপর আমাদের আসতে হয়। একটি স্বাধীন দেশে এরকম ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জার।
অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল ৬টা থেকে বরগুনা থেকে ঢাকাগামী সকল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে ঢাকাগামী দূরপাল্লার পরিবহন যাত্রীরা। তাই তাদেরও দাবি সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
ঢাকাগামী বাসের যাত্রী মনির হোসেন বলেন, সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে শুনে বাস চলাচল বন্ধ। বিকালে আমার অফিসে জয়েন করার কথা না পৌঁছাতে পারলে কি হবে বলতে পারছি না। আমাদের দাবি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হোক।
আরেক যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, আমার আম্মা অসুস্থ । তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমি বরগুনায় চাকরি করি। এখন মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে এসে শুনি বাস বন্ধ এখন কি করবো কিছুই বলতে পারছি না।
কাউন্টার পরিচালক পিলু ঘোষ বলেন, গত ২০ বছর ধরে এই সড়ক দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল করে আসছে। বরগুনা থেকে ফেরি ছাড়া ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র সহজ মাধ্যম এই সড়ক। এই সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলের জন্য বিআরটিএর অনুমতি না থাকায় বরিশালের রূপাতলী বাসমালিক সমিতির নেতারা। তারা এই সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন এবং আমাদের শ্রমিকদের নির্যাতন করছেন । দীর্ঘ বছর ধরে এই পথে যানবাহন চলাচল করলেও স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই বরিশালের বাস মালিক সমিতির নেতারা বাকেরগঞ্জ থেকে বরগুনার বরগুনা ঢাকা বরগুনার চলাচলকারী পরিবহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। তাদের বাধার প্রতিবাদে আমাদের এই ধর্মঘট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যতোক্ষণ পর্যন্ত সমাধান না করবেন ততোক্ষণ আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাবো।
বরগুনা দূরপাল্লার পরিবহন পরিচালক কমিটির যুগ্ন আহবায়ক একে আজাদ বাবলু বলেন, বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়ক দিয়ে ঢাকা-বরগুনা রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বরিশালের রুপাতলী বাস মালিক সমিতির মালিক ও শ্রমিকরা। এতে ঢাকা থেকে বরগুনা পৌঁছাতে সময় লাগছে ১০ ঘণ্টা। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যাত্রীরা। পাশাপাশি পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ রুটের যাত্রীরা। যাত্রী ভোগান্তি ও বরিশাল বাস মালিক সমিতিরি স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। দাবি পূরণ হলেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানান পরিবহন পরিচালক সমিতির এই নেতা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল