চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় মাগুরার মহম্মদপুরের নিখোঁজ ছয়জনের মধ্যে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দুজনের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। উদ্ধার হওয়া চারজনের পরিচয় শনাক্ত করে এলাকায় নিয়ে দাফন সম্পন্ন করেছেন স্বজনরা।
গত বুধবার বেলা পৌনে তিনটায় বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পাথর বোঝাই করে ফেরার পথে এমভি আকিজ লজিস্টিকস ২৩-এর সঙ্গে সংঘর্ষে এমভি সুলতান সানজানা ডুবে যায়। জাহাজটিতে ৯ জনের মধ্যে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার আটজন ছিলেন। এদের মধ্যে দুজন জীবিত ও চারজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। নাম ও পরিচয় পাওয়া চারজনের বাড়িই মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দুই গ্রামে।
তারা হচ্ছেন-উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের মন্ডলগাতি গ্রামের খসরু বিশ্বাসের ছেলে সুরুজ মিয়া (২২), নুরোল মোল্যার দুই ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২৯) ও মনিরুল ইসলাম (২৭) এবং বাবুখালী ইউনিয়নের দাতিয়াদাহ গ্রামের আকরাম হোসেনের ছেলে নাজমুল হাসান (২৭)। শুক্রবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী এসব মরদেহ উদ্ধার করেন বলে জানা গেছে। অপর নিখোঁজ দুইজন হচ্ছেন-নূরোল হোসেন মোল্যার ছেলে শিমুল মোল্যা ও গোলাম রসুল মোল্যার ছেলে নূর মোহাম্মদ বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছে।
ঘটনার দিন জীবিত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। তাদের মধ্যে দুইজন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পশাবাড়ীয়া ইউনিয়নের যশোবন্তপুর গ্রামের রুবেল ও নহাটা ইউনিয়নের খলিসাখালী গ্রামের রবিউল ইসলাম রয়েছেন।
উদ্ধার হওয়া রুবেল মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমরা পাথর নিয়ে জাহাজে করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পেছন থেকে অন্য একটি জাহাজ আঘাত করে। এ সময় আমাদের এমভি সুলতান সানজার জাহাজটি পানিতে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া জাহাজের মধ্যে মাগুরার মহম্মদপুরের মোট আটজন ছিল। আমার সঙ্গে রবিউল কূলে উঠলেও অন্য ছয়জনের খবর পাওয়া যাচ্ছিল না।
মহম্মদপুরে নিখোঁজ ওই পরিবারগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে শোকের মাতম। দাতিয়াদাহ গ্রামের নাজমুল হাসানের পরিবারের লোকজন জানান, মাত্র ১০ দিন আগে তিনি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছেন। তার নিখোঁজের খবরে বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মন্ডলগাতী গ্রামের নিখোঁজ শিমুল ও জাহিদুলের মা ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ছেলেরা বুধবার সকালে মোবাইল ফোনে কথা বলে কাজে যায়। পরে কথা বলবে জানালেও আর কথা হয়নি। এখন শুনছি তাদের জাহাজ ডুবে গেছে। লাশও পাওয়া যাচ্ছে না। এই শোক আমি কীভাবে সহ্য করবো?
মন্ডলগাতি গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর সবুর বলেন, আমাদের গ্রামের শতাধিক মানুষ চিটাগাং এলাকায় জাহাজ ও ট্রলারে কাজ করেন। কখনো এমন হয়নি। যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই