৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৮:০৯

কালকিনিতে ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে চাষাবাদে সফলতা

মাদারীপুর প্রতিনিধি:

কালকিনিতে ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে চাষাবাদে সফলতা

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে অধিক ফলন পাওয়ার প্রচেষ্টা বহুদিনের। তবে সম্পূর্ণ স্থানীয় প্রযুক্তিতে জলাবদ্ধ পতিত জমিতে ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে ফসলের চারা উৎপাদন ও চাষাবাদ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কৃষকরা। কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই জৈব সার ব্যবহার করে এ পদ্ধতিতে হচ্ছে চারা উৎপাদন ও সবজি চাষ। 

ভালো ফলন ও বাজারে এ সব সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় জেলার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে সবজি চাষ। আর এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে অপার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান ধাপ তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে- কচুরীপানা। আষাঢ় মাসে কচুরিপানা সংগ্রহ করে স্তুপ করা হয়। জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, দুলালীলতা, টোপাপানা, কুটিপানা, কলমিলতা, জলজ লতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে ২-৩ ফুট পুরু করে ধাপ বা ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়। ধাপ দ্রুত পচানোর জন্য সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে ৭-১০ দিন প্রক্রিয়াধীন সময় রাখতে হয়। এছাড়াও বাঁশ, নারকেলের ছোবড়ার গুড়া, তুষ, নৌকা প্রভৃতি প্রয়োজন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালকিনি উপজেলার রমজাপুর ইউনিয়নের কৃষক শাহীন রাড়ী পতিত জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ, বীজ, উপকরণ ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে জলাবদ্ধ জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে করছেন সবজি চাষ। আর এতেই বাজিমাত। কৃষক শাহীন রাড়ীর বেডে শোভা পাচ্ছে রঙিন লাল শাক এছাড়া মাঁচায় ঝুলছে সারি সারি লাউ, শশা, করলা, মিষ্টিকুমড়া। কৃষক শাহীন রাড়ীর সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আর সল্প দামে বিষ মুক্ত সুস্বাদু সবজি পাওয়ায় ক্রেতারা এই পদ্ধতির সবজি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

শাহীন রাড়ী বলেন, আমি এই ভাসমান পদ্ধতিতে গত ৫ বছর যাবত চাষ করি। এ চাষ করে আমি পরিবার নিয়ে খুব ভালো আছি। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহায়তা নিয়ে ৩৪ শতাংশ জমিতে ৩০টি বেডে ও ১৭টি মাদা আকারে ডিপি পদ্ধতিতে সবজি চাষে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার এখানে শশা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, লাল শাক তুলে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রি করি। ইতিমধ্যে প্রায় ৯০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। আরো ২ লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি হবে আশা করছি। 

পার্শ্ববর্তী এলাকার কায়কোবাদ শামীম বলেন, আমি শুনে এসেছি এখানে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে জৈব পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার মুক্ত সবজি চাষ করা হচ্ছে। মাঠগুলো ঘুরে দেখলাম খুব ভালো ফলন হয়েছে। তাই আমিও আমার বাড়ির পাশে জলাবদ্ধ পতিত জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছি।

স্থানীয় যুবক আবদুর রহমান বলেন, আমাদের বাড়ির পাশের শাহীন রাড়ী বিষমুক্ত সবজি চাষ করে সফল হয়েছে। তার সবজি খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। আমারা এখান থেকেই সবজি নিয়ে খাই। আমিও কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে তার মত এ পদ্ধতিতে আমাদের জমিতে সবজি চাষ করবো।

উপ-সহকারি কৃষি অফিসার তানভীর হাসান বলেন, ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ সহ সকল উদ্বুদ্ধ করণ ও কারিগরি সহায়তার করে আসছি। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ বিষ মুক্ত ও রাসায়নিক সার মুক্ত। এতে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন ও সফল হয়েছেন। ভাসমান ধাপ পদ্ধতিতে সবজি চাষ কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় শাহীন রাড়ীকে দেখে এলাকার ৩০-৪০টি পরিবার এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে নির্দেশনা এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না, ভাসমান পদ্ধতি তার প্রকৃষ্ট উদাহারণ। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয় নিয়মিত। অপেক্ষাকৃত নিচু জলাবদ্ধ ও ফসল হয়না এমন পতিত জমি এবং বিরুপ আবহাওয়ায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ ব্যাপক লাভবান হওয়া যায়, যার উদাহরণ কৃষক শাহীন রাড়ী। চারিদিকে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ ছড়িয়ে পরছে। বেকার যুবকরা এ পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কৃষি অধিদপ্তরের সহায়তায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে আশা করছি।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর