তীব্র শীতে কাঁপছে লালমনিরহাট। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। ছিন্নমূল মানুষরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন। কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। কমে গেছে যানবাহন চলাচল।
গত ৫ দিন থেকে দেখা মিলছে না সূর্যের। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম, ভোগান্তিতে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কয়েক লাখ শীতার্ত মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ। পরিবার গুলোতে শীতের পোশাক না থাকায় খড়কুটোর আগুনই ভরসা করে চলছে শীতার্ত দুস্থ মানুষ।
শুক্রবারও সূর্যের দেখা না পাওয়ায় বেড়েছে ঠাণ্ডার তীব্রতা। এতে কাবু হয়ে পড়েছে তিস্তা-ধরলাপারের শিশু, বৃদ্ধ সকলেই। তিস্তা-ধরলা পারের মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এদিন লালমনিরহাটের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান।
পৌষের শুরু থেকেই শীতের তীব্রতা বাড়ায় প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে সকাল ১০ টা ও সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে দিনে ও রাতে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন তারা। ঠাণ্ডার কারণে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে-খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। একটু উষ্ণতা পাওয়ার আশায় গ্রামাঞ্চলের শীতবস্ত্রহীন মানুষ তাকিয়ে থাকছেন সূর্যের আলোর দিকে। সারাদিন ঠাণ্ডার তীব্রতার কারণে হাট-বাজারেও লোকসমাগম অনেকটাই কম।
তিস্তাপাড়ের ইশোরকুল গ্রামের হায়দার আলী জানান, কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। তিস্তা পাড়ে প্রচুর শীত। এই এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর ও জেলে। ঠাণ্ডায় কাজ কর্ম না পেয়ে এই শীতের মৌসুমে তাদের কষ্ট বেড়ে গেছে।
সদরের গোকুন্ডার রিক্সাচালক জমির আলী বলেন, প্রচন্ড ঠাণ্ডা আর কুয়াশার জন্য সকাল থেকে রিক্সা বের করার সাহস পাইনি। খুনিয়াগাছ গ্রামের মহসিন বলেন, ঠাণ্ডার কারণে কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না। অনেক কষ্টে রাত কাটিয়েছি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি।
চরবেষ্টিত সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা দুর্গম। এখানে প্রায় ১৭টি চর রয়েছে। এসব চরে বসবাসকারী শীতার্ত মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বলতে ২৫০টি কম্বল পেয়েছি । তিনি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা.নির্মলেন্দু রায় বলেন, হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। উপজেলা মেডিকেল টিম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো জানান, গত ৪ দিন থেকে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় সদর হাসপাতালসহ ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে । গত ২৪ ঘন্টায় ২১৩ জন শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে । ভর্তি হয়েছে ৮৩ জন ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল