কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ডিক্রিকান্দা লাভুমুন্সি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার। গত ২৮ ডিসেম্বর মাকে নিয়ে মাদ্রাসায় ফরম ফিলাপ করতে যায় ফারিয়া। যাবতীয় ফি জমা দেওয়ার পর মাদ্রাসা থেকে জানানো হয় এ বছর তার পরীক্ষা দেওয়া হবে না। নবম শ্রেণিতে নাকি তার রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। তাই নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করে ২০২৬ সালে পরীক্ষা দিতে হবে। টাকা ফেরত দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
এমন কথা শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ফারিয়া। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে শুধুই কান্না করতে থাকে। ফারিয়ার বাবা-মা বার বার মাদ্রাসায় গিয়ে সুপারের দ্বারস্থ হয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করেন। সুপার অপারগতার কথা জানান। এক এক করে ঘটনাটি জানাজানি হয় এলাকায়। গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ অনেকেই সুপারের কাছে যান একটা ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যাদের অবহেলায় ফারিয়ার শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হতে চলেছে তাদের বিচার অথবা ফারিয়ার ফরম ফিলাপের ব্যবস্থা করা সকলের দাবি।
এ দাবিতে আজ রবিবার দুপুরে মাদ্রাসার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ফারিয়ার সহপাঠী ও এলাকাবাসী। এ সময় তারা মাদ্রাসার সুপারের নানা অনিয়ম দুর্নীতির কথাও তুলে ধরেন।
মানবন্ধনে ফারিয়া ও তার মা হাবিবা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফারিয়া জানান, পঞ্চম শ্রেণি থেকে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখন দাখিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু নবম শ্রেণিতে তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি, সেটা সুপার বা শিক্ষকদের কেউ কোনদিন জানায়নি। ডিক্রিকান্দা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাইদুর রহমান জানান, সুপারের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে মাদ্রাসাটি আজ ধ্বংসের পথে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল বলেন, ফারিয়ার পরীক্ষা না দিতে পারার দায়ভার সুপারকে নিতে হবে এবং তিনিসহ দায়ী সকলকে পদত্যাগ করতে হবে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, নবম শ্রেণিতে ফারিয়ার রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার বিষয়টি গত ২৮ ডিসেম্বর জানতে পারেন তিনি। এ অবস্থায় বোর্ডে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন। কার অবহেলায় এমনটি ঘটেছে জানতে চাইলে সুপার নিজেই দায়ভার স্বীকার করে বলেন, শ্রেণি শিক্ষক তাকে বিষয়টি জানালে আজ এমন পরিস্থিতি হতো না।
এদিকে ফারিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার দাখিল পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যাদের অবহেলায় তার শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হতে চলেছে, তাদের বিচার দাবি করে আজ রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল