নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার মেয়র ও সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়া মামলা দায়ের করেছে।
সরকারি বিধি ও পরিপত্র লঙ্ঘন করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ করে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে রেকর্ডপত্র সৃষ্টিপূর্বক এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালার বিধিবিধান এবং সরকারি প্রজ্ঞাপনের নিয়ম ভেঙ্গে কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, কুমারখালী, কুষ্টিয়ায় শিক্ষক-কর্মচারী পদে নিয়োগ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়।
মঙ্গলবার বিকালে দুদক কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক নীল কমল বাদী হয়ে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতের বিচারক আশরাফুল ইসলামের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা, ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৮ এর বিধিবিধানসহ সরকারি প্রজ্ঞাপনের নিয়ম ভঙ্গ করে কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক/কর্মচারী পদে নিয়োগদান ও গ্রহণ করে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭ / ৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারার অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে জড়িতদের বিরুদ্ধে। মামলা নং ০২, তাং ০৭/০৩/২০২৩।
আসামিরা হলেন ১। কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম, কুমারখালী পৌর মেয়র ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি ২। সামসুজ্জামান অরুন, ৩। কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুস সাত্তার, ৪। গণিত বিভাগের সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান, ৫। সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার আসমা বেগম মালা (৪৪), ৬। ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষক এস এম আতি-বিন বাপ্পী (৩৪), ৭। সহকারী শিক্ষক সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ কুতুবুল আলম (৩৩), ৮। মনিরা পারভীন (৩৩), ৯। সহকারী শিক্ষক জীব বিজ্ঞান বিভাগ লুৎফুন নাহার লাবনী (৩৮), ১০। ভৌতবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক শেখ মো. সেলিম রেজা (২৮), ১১। কম্পিউটার ডেমোনেস্ট্রেটর সাদী আক্তার(২৬), ১২। ভৌতবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদী (৩৬), ১৩। ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক আমিরুল ইসলাম (৩৮), ১৪। সমাজ বিজ্ঞান সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম (৪৮), ১৫। নিম্নমান সহকারী বাসনা রানী কর্মকার (৪৪), ১৬। আয়া রুপালী খাতুন (৪৪), ১৭। পরিচ্ছন্নতা কর্মী সনজিত কুমার বাঁশফোর (৩৬), ১৮। নৈশ প্রহরী নাসিম হোসেন (৩৪), ১৯। অফিস সহায়ক আলমগীর হোসেন (৪১), ২০। নিরাপত্তা প্রহরী আমিরুল ইসলাম (২৫), ২১। ল্যাব সহকারী খাদিজাতুল কোবরা (৪১), এবং ২২। কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৭)।
এ বিষয়ে কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, ‘দেখুন আমার শিক্ষকতার বয়স ৩৭ বছর, ৯ মার্চ রিটায়ারমেন্টে যাচ্ছি। এ সময়ে এই মামলা হয়তো আমার শেষ জীবনের একটা কলঙ্ক হয়ে থাকবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নই, মামলা হয়েছে, আমিও আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করি। তবে এই মামলাটি কোন প্রভাবশালী স্বার্থন্বেষী মহলের ইন্দ্বনে হয়েছে বলে আমি মনে করি’।
কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামসুজ্জামান অরুন বলেন, ‘এটা আদৌতে একটা বানোয়াটি মামলা। এখানে যে অভিযোগে আমাকে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। সেসব বিষয়ের সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনরূপ সম্পৃক্ততা নেই। কোন স্বার্থন্বেষী ব্যক্তি হীনস্বার্থে আমার সুনামক্ষুন্ন করতে এই মামলার ইন্ধন যুগিয়েছে’।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত