ফরিদপুর জেলায় এ বছর পিয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা। গত বছর পিয়াজ আবাদ করে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লাভবান হতে পারেননি তারা। এ বছর শুরুতেই পিয়াজের দাম কম থাকায় চিন্তায় পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। গত বছরের লোকসান সামাল দিয়ে এ বছর পিয়াজ বিক্রি করে ঘুরে দাঁড়ানোর যে আশা করেছিলেন তাতে কতটুকু সফল হবেন এ নিয়ে দোলাচালে রয়েছেন তারা। জেলার মধ্যে বেশি পিয়াজের আবাদ হয় নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায়। সালথার রঘুয়ারকান্দি গ্রামের
পিয়াজ চাষি লোকমান মোল্যা বলেন, গত বছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে হালি পিয়াজ চাষ করেছি। সব মিলিয়ে প্রতিবিঘা জমিতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর প্রতিবিঘায় পিয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ মণ। উৎপাদিত প্রতিমণ কাঁচা পিয়াজ বিক্রি করেছি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। কিছু পিয়াজ বেশি দামে বিক্রির আশায় ঘরে মজুদ রাখায় শুকিয়ে অনেক ঘাটতি হয়েছে। বছরের শেষে সেগুলো প্রতিমণ বিক্রি করেছি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। এতে হিসাব করে দেখা গেছে, উৎপাদন খরচও ওঠেনি। বরং উৎপাদন খরচ বাদে বিঘা প্রতি অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
নগরকান্দার পিয়াজ চাষি ফয়সাল হোসেন বলেন, এ বছর খেত তেমন একটা ভালো হয়নি। তারপরও দাম নেই বললেই চলে। বর্তমানে প্রতি মণ পিয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এটা চলমান থাকলে আমরা পথে বসে যাব। নগরকান্দার পুরাপাড়া এলাকার আরেক চাষি নুর আলম বলেন, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে এবার আমি মুড়িকাটা পিয়াজ চাষ করেছি। ১২ হাজার টাকা দিয়ে ১০ মণ ছোট (গুঁটি) পিয়াজ কিনে এক বিঘায় জমিতে রোপণ করি। সার-ওষুধ, সেচ, শ্রমিক মজুরি ও বাজারজাত বাবদ সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার ওপরে খরচ করে পিয়াজ পেয়েছি ৭০ মণ। প্রতি মণ পিয়াজ এবার বিক্রি করেছি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। এতে হিসাব করে দেখা যায়, এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পিয়াজ চাষ করে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস বলেন, সারা দেশের মসলা ফসলের অন্যতম জোগানদার সালথার কৃষকরা। প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন পিয়াজ উৎপাদন হয় সালথায়। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৩৯৫ হেক্টরের বিপরীতে ১০ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে হালি পিয়াজ চাষ করা হচ্ছে। ফলনও আশানুরূপ হবে প্রত্যাশা করি। ১৩০ হেক্টর জমির মুড়িকাটা পিয়াজ তোলা হয়েছে। কিন্তু দাম না পেয়ে চিন্তিত কৃষকরা।
নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার বলেন, নগরকান্দায় এবার ৭ হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমিতে হালি পিয়াজের চাষ হচ্ছে। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে ও আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার পিয়াজের গড় ফলন আশানুরূপ হবে। আর ৩৭৮ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পিয়াজ আবাদ হয়েছে। পুরো উপজেলায় এবার প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হবে। বাজারমূল্য কম থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ