দিনাজপুরের বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীর কর্মচারীদের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের উপর হামলা-মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রাতেই নারীসহ ৮ জনকে আটক করে পুলিশ।
গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। রবিবার দিবাগত রাত দেড়টায় জবি শিক্ষার্থী অনামিকা আক্তার বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
এর আগে রবিবার দিবাগত সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নবাবগঞ্জের স্বপ্নপুরীতে হামলা-মারধরের ঘটনায় ১০ শিক্ষার্থীসহ ১৪ জন আহত হন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ।
আটককৃতরা হলেন সবুজ মিয়া (২৯), রেজওয়ান আহম্মেদ (১৮),আশরাফুল ইসলাম (১৭), প্রভাস কিস্কু (৩৬), আজিজুল হক (৩৯), জাহিদুল ইসলাম (৪৫), মানিকুল ইসলাম (৩২) ও সালমা আক্তার (২১)। এদের মধ্যে পাঁচজন স্বপ্নপুরী বিনোদন কেন্দ্রের কর্মচারী এবং তিনজন বহিরাগত রয়েছেন।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তালহা, আরাফাত, আল মামুন, ওমর ফারুক, তাওহিদুল, মবিনুর, জিন্নাহ, আশরাফুজ্জামান, মকছেদুল, বিনয় চন্দ্র, জাহিদুল আলম, প্রান্ত, সাকিব, বিনজন বসাক। আহত শিক্ষার্থীদের রবিবার রাত ৭টায় পুলিশ উদ্ধার করে প্রথমে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং বাকিরা ফুলবাড়ী উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহিউদ্দিন মাহী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ মোট ৮৩ জনের একটি দল ফিল্ড ওয়ার্কে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি পরিদর্শন শেষে রবিবার বিকালে বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে আসি। সেখান থেকে পৌনে ছয়টায় তারা বের হয়ে জয়পুরহাটে ফেরার সময় বিনোদন কেন্দ্রের একটি রাইডে একজন তার ব্যাগ ফেলে আসেন। পরে আরেক ছাত্রীকে নিয়ে তিনি ব্যাগ আনতে যান। এসময় ওই রাইডের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী তাদের উত্ত্যক্ত করেন। ওই দুইছাত্রী বিষয়টি সহপাঠীদের জানালে তারা প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে বিনোদনকেন্দ্রের কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। স্বপ্নপুরীর কর্মচারীরা লাঠি, সোটা, রড দিয়ে শিক্ষার্থীদের বেদম মারপিট করে। এতে ১০ শিক্ষার্থী আহতসহ কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। অধ্যাপক মাহীউদ্দিন আরও বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অনামিকা আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী ও দিনাজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন জানান, রাইডে এক শিক্ষার্থী ব্যাগ রেখে চলে যায়। পরে আরেক শিক্ষার্থী ফেরত নিতে এলে কর্মচারীরা ব্যাগের প্রকৃত মালিককে ডাকতে বলেন। পরে তিনি এসে ব্যাগ ফেরত নেন। কিন্তু আগের জনকে কেনো ব্যাগ ফেরত দেওয়া হলো না এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঝামেলা তৈরি করেছে। তিনি আরও জানান, এখানে উত্ত্যক্তের কোন ঘটনা ঘটেনি। মারধরে আমার কর্মচারী ৬-৭ জন আহত হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা তা না মেনে মামলা করেছেন।
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনাটি দুঃখজনক। এ ঘটনায় রবিবার রাতেই ৮জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক শিক্ষার্থী। মামলায় এক নারীসহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ