২৩ মার্চ, ২০২৩ ১৭:৫৬

বগুড়ায় নারী ও শিশু ডেস্কে সেবা পেয়েছে ১৫ হাজার অভিযোগকারি

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় নারী ও শিশু ডেস্কে সেবা পেয়েছে ১৫ হাজার অভিযোগকারি

বগুড়ায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী আইনী সেবা প্রদানে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। হাজার হাজার অভিযোগ সমাধানে এগিয়ে যাচ্ছে জেলার ১২ থানায় গঠিত এই হেল্প ডেস্ক। হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে নারী ও শিশুর মানসিক নির্যাতন, স্বামী ও স্ত্রীর পরকীয়া, পারিবারিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ আর অনিয়ম নিয়ে কাজ করছে। গত দুই বছরে জেলায় প্রায় ১৫ হাজার অভিযোগকারিকে সেবা দিয়েছে এই হেল্প ডেস্ক। তারপরও নারীদের অভিযোগ আসছে পাহাড়সম।

জানা যায়, ২০১৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে বগুড়া সদর, সোনাতলা ও নন্দীগ্রাম থানায় এই হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়। থানায় আগতরা এই হেল্প ডেস্কের সহযোগিতা নিতে শুরু করে। থানা তিনটিতে হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে পারিবারিক সমাধান, সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের সুফল পাওয়া গেলে পরে জেলার সকল থানায় এই হেল্প ডেস্ক গঠন করা হয়। নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধিদের কোন অভিযোগ নিয়ে থানায় এলে তাদের হেল্প ডেস্কে পাঠানো হয়। এরপর ডেস্কে নিয়োজিত নারী পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।

নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী আইনী সেবা হেল্প ডেস্ক সূত্রে জানা যায়, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মামলা শূন্যের কোঠায় আনতে এবং আন্তরিকতা ও পেশাদারির সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে বগুড়ার ১২টি থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালু হয়েছে। এই ডেস্কে অভিযোগগুলো সমাধান করার পর আবারো নতুন নতুন অভিযোগ আসছে। অভিযোগকারিদের মধ্যে নারী বা গৃহবধূরাই বেশি। ৮০ শতাংশের বেশি অভিযোগ আসছে পারিবারিক বিষয় নিয়ে। স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর নির্যাতন ও যৌতুকের বিষয় নিয়ে অভিযোগ আসছে বেশি। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং পরকীয়া নিয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ করছেন গৃহবধূরা। এসব অভিযোগ সমাধান করার পরেও আবারো অন্য নারী বা গৃহবধূরা করছেন নতুন অভিযোগ। 

হেল্প ডেস্ক থেকে অভিযোগকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাম-পরিচয় এবং অভিযোগের বিষয়টি গোপন রেখে তাকে আইনগত সহযোগিতা করা হয়। ২০২১ সালে বগুড়া জেলায় ১২টি থানায় ৫ হাজার ৭৪৯ জনকে সেবা প্রদান করা হয়। আর অভিযোগ করা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৬টি। এর মধ্যে শুধু শিশু বিষয়ক অভিযোগ করা হয়েছে ১১৯টি, জিডি ৭০৫টি, এফ আই আর ৪৬৬টি, নারী ও শিশুকে যৌন হয়রানী ২১২টি, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ৪৪৬টি, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা ১২৬টি, শারীরিক নির্যাতন ৮২৪টি, ২ হাজার ৫০৮ টি মানসিক নির্যাতন, ১ হাজার ১২৮টি পারিবারিক কলহ, ১৭৫টি অপহরণসহ ১২ জনকে সেফহোমে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১৮৮টি অভিযোগ। সেবা দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬৮২টি, পূর্নবাসনকেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে ৯ জনকে, উদ্ধারকৃত শিশু অভিভাবকদের জিম্মায় দেয়া হয়েছে ৫০ জনকে। ২০২২ সালে সেবা দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৩ জনকে। আর অভিযোগ করা হয় ৭ হাজার ৬০১টি। ২০২২ সালে শুধু নারী বিষয়ক অভিযোগ করা হয়েছে ৭ হাজার ৬০১টি। নিস্পত্তি হয়েছে ৬ হাজার ৮৮০টি। বাকি আবেদন এখনও নিস্পত্তি না হলেও আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ২০২০ সালে জেলায় সেবা পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১৩ জন। 

বগুড়া সদর থানার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী আইনী সেবা হেল্প ডেস্কের নারী কর্মকর্তা এস আই জেবুন নেছা জানান, পারিবারিক বিষয় নিয়েই বেশি অভিযোগ এসে থাকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এবং কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে এ ধরণের অধিকাংশ অভিযোগ নিস্পত্তি করা হচ্ছে। এতে বহু সংসার ভাঙনের হাত রক্ষা পাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইভটিজিং, যৌন হয়রানী, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শিশু নির্যাতন ও অপহরণসহ নানান অভিযোগও করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে ধর্ষণসহ গুরুতর অভিযোগগুলোর বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করে আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে। নারী ও শিশু সহায়তা ডেস্ক স্থাপিত হওয়ায় থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে হয়রানি কমেছে। গুরুতর অভিযোগ ছাড়া বেশির ভাগ পারিবারিক বিরোধ মামলা ছাড়াই সন্তোষজনক নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, নারী, বয়স্ক, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সেবা প্রদানে হেল্প ডেস্কে একজন এসআই, একজন এএসআই ও তিনজন নারী কনস্টেবল দায়িত্বপালন করছেন। ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। শুধু বগুড়াই নয়, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি থানায় স্থাপন করা হয়েছে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক। প্রায় ১৫ হাজারের বেশি সেবা প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগের ধরণ বুঝে সে মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। চার শ্রেণির মানুষের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেবা গ্রহীতারা সেবা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছে। থানায় আগত কোন সেবা প্রার্থী যেন দ্রুততার সাথে সেবা পান সে বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর