পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, অনুকূল আবহাওয়া থাকার পরও ২০২২ সালে শ্রমিক সংকটের কারণে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে সবকিছু অনুকূলে থাকলে এ বছর ১০ কোটি কেজির বেশি চা উৎপাদন হবে বলে আশা করছে চা বোর্ড। এবছরও মৌসুমের শুরুতে হালকা বৃষ্টির ছোঁয়ায় চা বাগানগুলোতে সুবাতাস বইছে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ আরেকটু বেশি হলে বাগানের জন্য আরো ইতিবাচক হতো বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
চা বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি বছর দেশের ১৬৭টি চা বাগানে ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩ লাখ ৬৪ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল ২০২৩-২৪ নিলাম বর্ষের প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রামে। এরপর শ্রীমঙ্গলে ২৬ এপ্রিল আরেকটি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, চা বোর্ডের নেওয়া নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন ও এই শিল্পের অংশীজনদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে চা উৎপাদনে নিয়মিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ বছর আবহাওয়া, নিলাম কার্যক্রম ঠিক থাকলে ১০ কোটি ২০ লাখ কেজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে না।
চা বোর্ডের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি, ২০২১ সালে ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি লক্ষ্যমাত্রা ধরে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে ১০ কোটি কেজি লক্ষ্যমাত্রা ধরে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়। এই হিসেবে- ২০২১ ও ২২ সালে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও ২০২২ সালে উৎপাদন কমে যায়।
টি ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও উৎপাদন উপযোগী পরিবেশ বজায় থাকায় চা উৎপাদন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে ১০ কোটি কেজি পার হওয়ার প্রত্যাশা করা হয়। কিন্তু গত আগস্টে চা বাগানগুলোতে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে পাঁচ-ছয়টি নিলামে চা সরবরাহের পরিমাণ কমে যায়। পরে শ্রমিক সংকট সমাধান হলেও উৎপাদনে যে ঘাটতি ছিল সেটা কাটিয়ে ওঠা যায়নি। তবে এবারো মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি চট্টগ্রামের বাগানগুলোর জন্য ইতিবাচক হয়েছে।
চায়ের নিলাম কার্যক্রম নিয়ে পরিকল্পনা ঠিক করতে গত সোমবার সভা করে ‘টি সেলস কো-অর্ডিনেশন কমিটি’। সভায় ঠিক করা হয়- ২০২৩-২৪ নিলাম বর্ষে ৬৯টি নিলামে চা কেনাবেচা হবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্রে ৪৬টি এবং শ্রীমঙ্গলে ২৩টি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণ বলেন, ‘গত কয়েকদিনের বৃষ্টি চা বাগানগুলোর জন্য বেশ ভালো হয়েছে। আরেকটু বৃষ্টি হলে আরো ভালো হতো। এই বৃষ্টি চা গাছে নতুন কুঁড়ি জন্মাতে ভালো ভূমিকা রাখবে। আগামী কয়েকমাসে চায়ের উৎপাদন বাড়তে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং ‘টপ পিক’ সময় আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে কোনো প্রতিবন্ধকতা না আসলে চলতি বছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল