৫ মে, ২০২৩ ১৭:০৬

শেরপুর সীমান্তে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব থামছে না

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুর সীমান্তে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব থামছে না

লাঠিসোঁটা নিয়ে হাতির পিছু নিয়েছে একদল মানুষ

শেরপুর জেলার সীমান্ত অঞ্চল মেঘালয় ঘেঁষা শ্রীবরদি, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী বনে মানুষ হাতি দ্বন্দ্ব থামছে না। এই দ্বন্দ্বে গত এক সপ্তাহে তিনজন কৃষক হাতির পায়ে পৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছেন।

গত বছরের শেষ দিকে তিনটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত এক যুগে অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ হাতির পায়ে পৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছেন যারা অধিকাংশই কৃষক। আহত হয়েছেন অনেকেই।

এই দ্বন্দ্বে একই সময়ে প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক হাতির। ক্ষতি হয়েছে ফসল আর বাড়ি-ঘর। মানুষ ও হাতির এই দ্বন্দ্ব কমাতে সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে পাহাড়ে বৈদ্যুতিক বেড়া (সেলার ফেনসিং)নামক প্রকল্প চালু করেছে কয়েক বছর আগে। তারও আগে কাঁটাযুক্ত গাছ ও নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। এখন ধান কাঁটার মৌসুমে ফসল বাঁচাতে লাঠিসোঁটা ও আগুনের গোলা নিয়ে রাতদিন কৃষকরা পাহারা বসিয়েছে। এর মধ্যে যেকোনো সময় হাতি দলবল নিয়ে ধান খেতে নেমে পড়ছে। বাধা দিলেই শুরু হচ্ছে লড়াই। পাহাড়ের মানুষজন বলছে, হাতি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে।

পাহাড়ের মানুষজন বলছে, কয়েক বছর ধরে হাতি কিছুই আর মানছে না। বাধা দিলেই উলটো আক্রমণ করছে। বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দ্বন্দ্ব নিরসন করতে বনে হাতির জন্য প্রাকৃতিক অভয়াশ্রমই সমাধান।

সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ বলছে বৃহদাকার এই প্রাণীটি কমপক্ষে দৈনিক ১৫০ কেজি খাবার খায়। কিন্তু মানুষের কারণে তারা খাদ্য সংকটে পড়েছে। কমেছে হাতির বিচরণ ক্ষেত্র। খাদ্য সংকট এবং স্বাভাবিক চলাফেরায় বিপত্তি ঘটায় মানুষের সাথে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে হাতি।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ আরও বলছে, পাহাড়ে বনাঞ্চল উজাড়, হাতির বসতি ধ্বংস, হাতির খাবার সংকট, স্বাভাবিক চলাচলে বাধা, মানুষের নিষ্ঠুরতা, হাতির বসতিতে মানববসতি গড়ে ওঠা, বনাঞ্চলে সড়ক নির্মাণ ইত্যাদি কারণে এই দ্বন্দ্ব বাড়ছে।

শেরপুরের এক সময় গভীর বনাঞ্চল এখন অনেকটা আবাসিক, আধুনিক প্রকল্প ও উর্বর চাষবাসের উত্তম ক্ষেত্র হয়ে গেছে। এসবে হাতির বসবাস ও খাবারের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বৈদ্যুতিক আলো আর গাড়ির শব্দ পাহাড়ের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু ইউসুফ বলেন, মানুষ ও হাতির এই দ্বন্দ্ব অবসানে বছর খানেক আগে এই অঞ্চলে ২২ হাজার একরের অভয়াশ্রমের প্রস্তাব দেওয়া হয়। মানুষ ও হাতিকে বাঁচাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে  হবে। শেরপুরে যে পরিমাণ বনাঞ্চল তাতে এত সংখ্যক হাতি ধারণ করা সম্ভব না। এজন্য ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে দুই দেশের হাতির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি প্রকৃতি নষ্ট না করে বনের মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। 

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর