পাল্টে গেছে নাভারনে অবস্থিত শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসার মান। একই সাথে পরিবর্তন এসেছে অবকাঠামোর। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার বদলে এখন শোভা পাচ্ছে সাজানো-গোছানো বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ।
চিকিৎসকরা নিয়মিত বসছেন চেম্বারে। নির্ধারিত সময়ের আগে কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর হাসপাতাল ছাড়ার সুযোগ নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে চিকিৎসা সেবা বেড়েছে, বলছে সাধারণ জনগণ। সরকার চিকিৎসা খাতকে গুরুত্ব প্রদান করেছে যার সুফল পাচ্ছে শার্শা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
তবে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে সেবার মান বাড়লেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা অনুষঙ্গের অভাব রয়েছে। হৃদরোগ এবং কিডনির চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলে জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের সেবা গ্রহীতারা চিকিৎসা সুবিধা পেয়ে উপকৃত হতেন। হাসপাতালে সার্জিক্যাল বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, গাইনি বিভাগ ও অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট পদে ডাক্তার নিয়োগ প্রদান হলে চিকিৎসার মান আরও বাড়বে।
বর্তমান প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, বেনাপোল স্থলবন্দরে মেডিকেল টিম নিয়োজিত করে। হেলথ স্কিনিং, মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা সেবা, আক্রান্ত যাত্রীদের আইসোলেশন, ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়ন, কোয়ারেন্টাইনভুক্ত যাত্রীদের চিকিৎসা সেবা, করোনা পরীক্ষাপূর্বক প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের জেলা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালসহ বিভাগীয় বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে স্বাস্থ্য বিভাগ। জরায়ুমূখে ক্যান্সার প্রতিরোধ কার্যক্রমে অবদানের জন্য ২০২২ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
শার্শা উপজেলাসহ বেনাপোল বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কাস্টমস, বিজিবি, পুলিশ, সাংবাদিক, আনসার সদস্য, খালাসি এবং শ্রমিক সকলের করোনা পরীক্ষা করা, করোনা টিকা প্রদানে অসামান্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে এই হাসপাতালটি। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে গতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মডেল এনসিডি কর্নার প্রতিষ্ঠা, ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহসহ আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা মেডিকেল অফিসারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়াগনস্টিক সেবা চালু করা হয়েছে। ডাক্তার ইউসুফ আলী শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর ক্যাম্পাসে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। হাসপাতালের রান্না-ঘরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং সেখানে কাঠের পরিবর্তে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে।
করোনার সময় থেকে করোনা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে জাইকার অর্থায়নে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতাল ক্যাম্পাসটি পূর্বে জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল, সেখানে এখন ফুলের বাগান, ভেষজ বাগান, ফলের বাগান শোভা পাচ্ছে।
স্থানীয় বুরুজবাগান গ্রামের আসাদুজ্জামান বলেন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি বর্তমানে দেশের একটি মডেল হাসপাতাল। স্বাস্থ্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত দুই বছর আমি এখানে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ নিচ্ছি। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে এখন কেউ ফিরে যায় না। মেডিকেল অফিসাররা অতি যত্নসহকারে রোগীদের কথা শোনেন এবং চিকিৎসাপত্র দেন।
ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের কর্মতৎপরতায় মুখর থাকে যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারাও খুশি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা পেয়ে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইউসুফ আলী বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি যে কারণে শার্শা উপজেলায় সংক্রামক বাড়তে পারেনি। হাসপাতালে যোগদানের পর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অপরিচ্ছন্ন হাসপাতালটি দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমার প্রত্যাশা, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হলে এ এলাকার জনগণকে আর ৪০ কিলোমিটার দূরে যশোর শহরে যেতে হবে না।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল