প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জোর প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের নতুন রাষ্ট্রদূত বোরিস ভ্যান বোমেল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জোরদার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বাণিজ্য ও কৃষি, রোহিঙ্গাবিষয়ক মানবিক সংকটসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানান বিষয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত বোমেল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য তাঁর দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল এ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছে এবং নেদারল্যান্ডস এ মিশনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে।
দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অংশ হিসেবে পানি ব্যবস্থাপনাও আলোচনায় আসে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও উপকূলীয় নিম্নভূমি সুরক্ষায় ডাচ্ অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হয়েছে। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা একসঙ্গে অনেক কিছু নির্মাণ ও শেখার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি।’ ড. ইউনূস বর্তমানে কক্সবাজারে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি ডাচ্ সহায়তা কামনা করেন। তিনি জানান, অর্থসংকটের কারণে চলমান মানবিক কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন যে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিউইয়র্কে রোহিঙ্গাসংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলন আন্তর্জাতিক সমর্থন জাগ্রত করবে এবং শরণার্থী শিবিরে মানবিক সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড়ে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন-অগ্রগতি, বিশেষ করে সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গাসংকটের তাৎপর্য স্বীকার করে ডাচ্ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বেশি মনোযোগের দাবি রাখে। চলমান অন্যান্য ভূরাজনৈতিক সংঘাতের কারণে এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মনোযোগ কিছুটা বিভক্ত হয়ে পড়েছে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে অ্যানথ্রোপোসিন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান কার্ল পেজ ও তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল থাকার সামর্থ্য রাখে না। বাংলাদেশকে এখনই পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী জ্বালানি সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে, যাতে দেশ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন পথে এগিয়ে যেতে পারে। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশকে গুরুত্বসহকারে বিকল্প পরিচ্ছন্ন জ্বালানি বিবেচনা করার, যার মধ্যে বৃহৎ পরিসরে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন অন্যতম।’ গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের ভাই কার্ল পেজ পরবর্তী প্রজন্মের পারমাণবিক প্রযুক্তি এবং হাইব্রিড সিস্টেমে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এটা নির্ভরযোগ্য ও শূন্য কার্বন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম।’
অন্যদিকে ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের (ইউপিইউ) প্রশাসনিক কাউন্সিলে বাংলাদেশ পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ইউপিইউ কাউন্সিলের নির্বাচনে বাংলাদেশ ১৫৭-এর মধ্যে ৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। ১০ সদস্যের মধ্যে নবম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চার বছরের জন্য কাউন্সিলের সদস্যপদ পেয়েছে বাংলাদেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এ অর্জনকে ‘কূটনৈতিক সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।