গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে এখনো অনড় অবস্থানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। সংস্কারের জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে এখনো মতৈক্যে পৌঁছতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সময় যত গড়াচ্ছে ততই গণপরিষদকে ঘিরে জোরালো দাবি রাখছেন এনসিপির নেতারা। একই দাবিতে সমমনা দলগুলোকেও কাছে টানতে শুরু করেছে দলটি। গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জামায়াতে ইসলামী, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে এনসিপি।
এরই মধ্যে ২০১৮-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে এনসিপির ‘একীভূত’ হওয়া নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপি নেতৃবৃন্দ জানান, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রঅধিকার পরিষদের অনেক নেতা ২০২৪-এর জুলাই গণ অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেখান থেকে পরবর্তীতে যোগ দিয়েছেন এনসিপিতে। আদর্শগত মিল থাকার পাশাপাশি দুটি দলই তারুণ্যনির্ভর। গণঅধিকার পরিষদ নেতাদের সঙ্গে একীভূত হওয়া নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর অসুস্থ থাকায় এনিয়ে আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং রাজনৈতিক লিঁয়াজো কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তরুণদের শক্তিকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনতে পারলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তরুণদের আরও জোরালো ভূমিকা রাখা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে তারুণ্যনির্ভর রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার আলোচনা চলছে। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ জানান, এনসিপির সঙ্গে একীভূতকরণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। রাজনীতিতে তো অনেক কিছুই হতে পারে। তবে আমরা চাই, তরুণরা এক হয়ে বা একসঙ্গে রাজনীতি করুক।
জোটবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাবে এনসিপির কাছে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে এবি পার্টি। তবে আলোচনা করলেও জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন কিংবা জোট গঠন নিয়ে আগ্রহী নয় এনসিপি। নিজেদের বরাবরই মধ্যপন্থি দল হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছে এনসিপি। দলের সঙ্গে ডানপন্থি ট্যাগ যোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব রাখতে চায় তারা। তাছাড়া, জামায়াত সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর-এর দাবি জানিয়েছে। দলটির এ দাবির সঙ্গে একমত নয় এনসিপি। তারা শুধু সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর-এর পক্ষে।
এদিকে, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এবং জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গেও আলোচনা করেছে এনসিপি। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে শরিক এ দলগুলো এনসিপির সঙ্গে আসতে রাজি নয়। বরং এনসিপিকে নিজেদের গণতন্ত্র মঞ্চ জোটে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা।
এসব দলের সঙ্গে বৈঠকের সময় গণপরিষদ নির্বাচনের সুবিধা নিয়ে আলোচনা করছে দল গঠনের আগে থেকেই গণপরিষদের দাবি জানিয়ে আসা এনসিপি। আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও এর আইনি ভিত্তি নির্মাণে ঐকমত্য কমিশন এবং অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো যেসব পদ্ধতির কথা বলছে তার কোনোটাই টেকসই হবে না। এ সংকট সমাধানে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো গণপরিষদের আদলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যেসব দল নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের সুবিধার কথা তুলে ধরছি।
গতকাল ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার তুষার বলেন, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যারা নির্বাচিত হবে, তারা একই সঙ্গে গণপরিষদ গঠন করবে, একই সঙ্গে পার্লামেন্ট গঠন করবে। এই সহজ সমাধানের মধ্য দিয়ে না গেলে যতগুলো আলোচনা হয়েছে, প্রতিটারই অনেক ত্রুটি আছে। কিন্তু এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেস্ট সমাধান।