বগুড়ায় একটানা বৃষ্টি ঝড়েছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে ভালো ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘসময় ডুবে থাকছে বগুড়া পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা। সাথে দীর্ঘকালো মেঘ জমে আছে আকাশজুড়ে। বিরামহীন টানা বৃষ্টিতে জেলা শহরসহ পৌর এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় এই দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। একটানা বৃষ্টির ফলে বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় কাঁদা ও হাঁটু পানি জমে পথচারিদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ভঙ্গুর ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি নামছে না। হাঁটু পানি মাড়িয়ে কাজ সারতে হচ্ছে পৌরবাসীদের। প্রধান প্রধান সড়কে বৃষ্টির পরেও পানি জমে থাকায় শহরে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের।
গত কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে বগুড়ায়। কখনো কম কখনো বাড়ছে। কমা-বাড়ার বৃষ্টির দিনে শহরের প্রধান সড়ক কাজী নজরুল ইসলাম সড়, ঝাউতলা, ফতেহ আলী বাজার, বাদুরতলা, চকযাদু রোড, স্টেশন রোড, মালতীনগর, খান্দার, উত্তর ভাটকান্দি, সাবগ্রাম, ঘুনিয়াতলা, দত্তবাড়ি, উপশহর, চেলোপাড়া, জলেশ্বরীতলায় হাঁটু পানি জমে যায়। এইসব এলাকার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার ড্রেনের পানি উপচে সড়কে চলে আসায় অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায় সড়ক। ঠাণ্ডা বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। খানা খন্দে ভরা বগুড়া শহরের সড়কগুলোতে এমনিতেই চলাচল করা কষ্টদায়ক, তারমধ্যে দিনব্যাপী বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কাঁদা জমে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সারদিন বৃষ্টি হওয়ায় সূর্যের দেখা মেলেনি।
জানা যায়, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে আয়তনে এবং জনসংখ্যায় বড় বগুড়া পৌরসভা। ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া পৌরসভা প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৮ লাখের বেশি। নতুন ভোটার নিয়ে ২০২১ সালে ভোটার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭০ জন। ‘ক’ শ্রেণীর এই পৌরসভাটি আয়তন বড় হলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য পৌরসভার মতই বরাদ্দ পেয়ে থাকে। বগুড়া পৌরসভায় কার্পেটিং রাস্তা আছে ২২৯ কিলোমিটার। এছাড়া কাঁচা সড়ক, সিসি, আরসিসি, সেলিংসহ অন্যান্য রাস্তা রয়েছে আরো প্রায় ৬’শ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ ’শ কিলোমিটারের রাস্তা আছে। বগুড়া পৌরসভায় প্রায় ৯০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারি রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই পৌরসভায় মন্ত্রাণালয়ের নিয়োগ পাওয়ার কথা ১৬৪ জনের। সেখানে নিয়োগ পেয়েছে ৮৮ জন। বাকি পদগুলো এখনো পূরণ হয়নি। এই পূরণ আর অপূরণের স্বপ্ন নিয়েই ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত রেজাউল করিম বাদশা নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়র হন। তিনি পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করে গেলেও পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি। বৃষ্টি হলেই এখনো শহরের জিরো পয়েন্ট জলবদ্ধতায় ভরে যায়। পথচারিরা ড্রেনের ময়লা আবর্জনা মাড়িয়ে চলাচল করে। বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভার ময়লা জমা করে রাখা হয়। সেগুলো আবার বৃষ্টির সাথে ড্রেনের মাঝে চলে যায়।
বগুড়া পৌরসভার বর্ধিত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, উত্তর ভাটকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ পৌরসভা ট্যাক্স আদায় করছে। ড্রেনের কোনো ব্যবস্থায় করা হয়নি। বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বগুড়া পৌরসভার বাসিন্দা হামিদুল হক জানান, বগুড়া পৌরসভার অধীনে সকল সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা না হলে শহরে জলাবদ্ধা থাকবেই। এছাড়া সড়কে পানি জমে থাকার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, আমি মানুষের সেবা করার জন্য মেয়র হয়েছি। যদি সেবাই না করতে পারি, তাহলে মেয়র হয়ে কি লাভ। মানুষের মন জয় করে পৌরসভার ২১ টি ওয়ার্ডে সমানভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করে যাবো। বগুড়া পৌরসভাকে চাকচিক্য করে ফুটিয়ে তুলতে চাই। এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পৌরসভার উন্নয়ন কাজ করতে যে বরাদ্ধ চাওয়া হয় তা পাওয়া যায় না। আর যা পাওয়া যায় তা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বগুড়া পৌরসভার জলবদ্ধতা দূর করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল