ঝালকাঠিতে স্বামী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নির্যাতিত স্ত্রী মোসাম্মৎ ডলি আক্তার (৩০)। দ্বিতীয় স্ত্রী মিম্মি আক্তার রিয়াকে নিয়ে স্বামী তার প্রথম স্ত্রী ডলি ও তার নয় বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু কণ্যা জিনিয়া ইসলামকে পিটিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
অভিযুক্ত স্বামী সৈয়দ জুলহাস ঝালকাঠি সদরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার লাটিমসার গ্রামের আব্দুস সত্তারের ছেলে। জুলহাস বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সংসার করেন বলেও জানা গেছে।
শুক্রবার দুপুরে ঝালকাঠি টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম এর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ডলি আক্তার। এসময় তিনি জানান, ২০১৩ সালের জানুয়ারীতে জুলহাসের সাথে ডলির আনুষ্ঠানিক বিবাহ হয়। বিয়েতে জুলহাসকে ৩ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী দেয় ডলির বাবা আব্দুল রশিদ খান। পরের বছর ২০১৪ সালে তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
এর দের বছর পরে ২০১৬ সালে ডলির বাবার পেনশনের টাকা থেকে নগদ ২ লাখ টাকা ধার বাবদ চেয়ে নেয় জুলহাস। শ্বশুরকে ধারের টাকা ফেরৎ না দিয়ে আরো ২ লাখ টাকা ঠিকাদারী কাজের জন্য দাবি করেন। এবার স্ত্রী এবং শ্বশুরকে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন জুলহাস।
টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে দ্বিতীয় বিবাহ করেন জুলহাস। জুলহাসের বাড়ির পাশের এলাকা বীরকাঠি গ্রামের শাহজাহান মীরের কন্যা মিম্মি আক্তার রিয়াকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। বিবাহের ঘটনা জানাজানি হলে স্বামীর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে প্রথম স্ত্রী ডলির সাথে।
বর্তমানে নয় বছরের কন্যা সন্তানকে নিয়ে ডলি থাকেন তার বাবার বাড়িতে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে জুলহাস থাকেন তার নিজ বাড়িতে। তাদের কন্যা জিনিয়া ইসলাম মায়ের কাছে থেকে ঝালকাঠি সরকারী হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
এদিকে জুলহাস তার প্রথম স্ত্রী ও কন্যার ভরণপোষন বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে শালিস বৈঠক করেও কোন সুরাহা হয়নি। তবে সুরাহা পেতে ঝালকাঠি আদালতে একটি মামলা করেছেন ডলি আক্তার। যা বর্তমানে চলমান। আদালতের মামলা তুলে নেয়ার জন্য ডলিকে মারধরসহ বিভিন্ন সময়ে নানা রকম অত্যাচার এবং হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে স্বামী জুলহাস।
সংবাদ সম্মেলে ডলি আক্তার বলেন, 'চলতি মাসের ১৪ অক্টোবর শনিবার সকাল ১১টার দিকে ঝালকাঠি কামারপট্টি সড়ক দিয়ে হেটে যাওয়ার পথে আমার স্বামী তার দ্বিতীয় স্ত্রী মিম্মিকে নিয়ে আমাকে ও আমার মেয়েকে প্রকাশ্যে মারধর করে। তাদের এলোপাথারী আঘাতে আমার মেয়ে জিনিয়া ইসলামের একটি দাঁত পড়ে যায় এবং রক্তাক্ত জখম হয়। আর আমার শরীর ও মুখ জখম হয়।'
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে ডলি আক্তার বলেন, 'হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ঝালকাঠি থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। বর্তমানে আমাকে এবং আমার মেয়েকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভয়ভীতির মধ্যে জীবনযাপন করছি।'
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সৈয়দ জুলহাস বলেন, আমি তাকে ২০১৬ সালে তালাক দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা করেছে। হামলার ঘটনা মিথ্যা।
মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে সদর থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, আমি এমপির প্রোগ্রামে আছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল