সুন্দরবনের দুবলার চরের অস্থায়ী জেলে পল্লীতে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পাঁচ মাসব্যাপী শুঁটকি মৌসুম। সুন্দরবন বিভাগ থেকে পাস পারমিট নিয়ে গত দুই দিনে দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীর উদ্দেশ্যে বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলা থেকে রওনা হয়েছে কয়েক হাজার জেলে।
এসব জেলেরা নৌকা-ট্রলার যোগে মাছ ধরার জাল ও শুঁটকি পল্লীতে অস্থায়ী ঘর নির্মাণের সরঞ্জাম নিয়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ে দুবলার চরে গেছেন। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের সাগর পাড়ে ১৪টি চর নিয়ে দুবলা অস্থায়ী শুঁটকি জেলে পল্লী গড়ে ওঠে। বঙ্গোপসাহর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ শেষে তা রোদে শুকিয়ে শুটকি করবেন তারা। আর এই মাছ চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশেও বাজারজাত করবেন রপ্তানিকারকরা। শুঁটকি পল্লীতে জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য ১ হাজার ১০৮টি ঘর, ৭৮টি ডিপো এবং ৯৬টি দোকান স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ। শুঁটকি থেকে এবার ৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। গত মৌসুমে শুঁটকি আহরিত হয়েছিল ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ও রাজস্ব আদায় হয় সাড়ে ৬ কোটি টাকা।
পাস পারমিট নিয়ে দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার আগে জেলে শহিদ মল্লিক, বোরহান উদ্দিন, বেল্লাল হোসেন জানান, তারা সমুদ্রের লোনা পানি থেকে লইট্টা, ছুরি, খলিসা, ভেদা, চিংড়ি, ইছা ও রূপচাঁদা মাছ আহরণ করেন। এরপর টানা তিন থেকে চারদিন সেই কাচা মাছে রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করেন। এই শুটকি মাছ তৈরি করতে আগামী পাঁচ মাস সেখানে অবস্থানের অনুমতি মিলেছে। এই পাঁচ মাসে তাদের প্রয়োজনীয় রসদসহ যাবতীয় সবকিছু সঙ্গে নিয়ে দুবলার চরে গেছেন প্রায় ১৫ হাজার জেলে।
সুন্দরবনের দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, সুন্দরবনে শুঁটকি পল্লীতে প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার জেলে মাছ আহরণে যান। কয়েক হাজার জেলে শুক্রবার সন্ধ্যায় থেকে লোকালয় হতে সাগরপাড়ে দুবলায় যাওয়া শুরু করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে সব জেলে ও বহরদার সুন্দরবন বিভাগ থেকে পাস পারমিট নিয়ে দুবলা শুঁটকি পল্লীতে পৌঁছেছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী নূরুল করিম জানান, এ বছর ৩ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে শুঁটকি আহরণ মৌসুম। এই পাঁচ মাস বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলা, মেহেরআলীর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, চাপড়াখালী, কোকিলমনি ও হলদাখালীর চরে শুটকি প্রক্রিয়া করবেন প্রায় ১৫ হাজার জেলে। এ কারণে তাদের বনবিভাগ থেকে পাস পারমিট দেয়া হচ্ছে। পাস পারমিট নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীর উদ্দেশ্যে বাগেরহাটের মোংলা ও শরণখোলা থেকে রওনা হয়েছে কয়েক হাজার জেলে। যাওয়ার পথে সুন্দরবনের কোনো নদী-খালে প্রবেশ ও অবস্থান করতে পারবেন না শুঁটকি পল্লীগামী এসব জেলেরা। এছাড়া দুবলার চরে অবস্থান করার সময় সাগর ছাড়া সুন্দরবনের সম্পদ নষ্ট না করাসহ খালে প্রবেশ ও সেখানে মাছ ধরতে পারবেন না জেলেরা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল