হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে রাতভর হয়ে গেলে মণিপুরী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব মহা-রাসলীলা। শ্রীকৃষ্ণের মূল প্রেমরস আর সাধনক্রিয়ার মধ্যদিয়ে মনোবাসনা পূরণে শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর নৃত্যে তুলে ধরা হয় রাধা-কৃষ্ণের প্রেমরস। ঢাক-ঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল আর শঙ্খধ্বনি মধ্যদিয়ে উপজেলার ছয়শ্রী গ্রামে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী রাসনৃত্য। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মণিপুরী নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে ভক্ত-দর্শনার্থীদের। মণিপুরীদের এ মহা রাসলীলা দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষের ঢল নামে সেখানে।
জানা গেছে, প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনারম্ভরভাবে অনুষ্ঠিত হয় মহারাসলীলা। দিনের বেলায় রাখাল নৃত্যের পর থেকেই শুরু হয় রাসলীলা। শুরুতেই পরিবেশিত হয় রাসধারীতের অপূর্ব মৃদঙ্গ নৃত্য। মৃদঙ্গ নৃত্য শেষে প্রদীপ হাতে নৃত্যের তালে তালে সাজানো মঞ্চে প্রবেশ করেন শ্রী রাধা সাজে সজ্জিত একজন নৃত্যশিল্পী। তার নৃত্যের সঙ্গে বাদ্যের তালে তালে পরিবেশিত হয় মনিপুরী বন্দনা সংগীত। শ্রীকৃষ্ণ রূপধারী বাঁশি হাতে মাথায় কারুকার্য্য খচিত ময়ূর পুচ্ছধারী এক কিশোর নৃত্যশিল্পী তার বাঁশির সুর শুনে রাজগোপী পরিবেশিত হয়ে শ্রী রাধা মঞ্চে আসেন। রাতব্যাপী সুবর্ণ কংকনপরিহিতা মনিপুরী কিশোরীদের নৃত্য প্রদর্শন চলে।
মনিপুরীসহ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অনেকেই ছুটে আসেন মহারাসলীলা উপভোগ করতে। মনিপুরী নৃত্যকলা শুধু ছয়শ্রী নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখলে করে আছে। মহারাসলীলায় শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী সবার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে রাতে রাস উৎসব হয়ে উঠে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
মহারাসলীল উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. অঞ্জন কুমার সিংহ জানান, আরতির মাধ্যমে উৎসব শুরু হয় রাস উৎসব। এরপর মহাপ্রভুর ভোগ আরতি ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। তিনি বলেন, এবারও শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব উদযাপন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ