ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অতিরিক্ত জোয়ার ও বৃষ্টিপাতে গোপালগঞ্জ জেলার সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার ১ হাজার ৫১১টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া ঘেরের মোট আয়তন ৬১০ হেক্টর। এখান থেকে ৬৬৬ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে ৫৯৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছ, চিংড়ি ৬৮ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন, পোনা ২৯ লাখ পিস ও চিংড়ি পিএল ৬ দশকিম ৩১ লাখ পিস । এতে জেলার সহস্রাধিক চাষীর অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তারাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাছের ঘের পাড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন দীনবন্ধু। এক পলক দৃষ্টিতে ঘেরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তারাইল গ্রামের শতাধিক মৎস্য চাষীর ঘের তলিয়ে যায়। এতে ভেসে যায় কার্প, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। অনেকেই ঘেরে নেট দিয়ে বাঁধ দিয়েও মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি। আর কয়েকদিন বাদে এসব মাছ বিক্রির জন্য ঘের থেকে উঠানো হতো। কিন্তু সবকিছুই শেষ করে দিল ঘূর্ণিঝড় রিমাল।
মৎস্যচাষী দীনবন্ধু গাইন বলেন, সংসারের অভাব অনটন কাটাতে এ বছর ৩০ বিঘা ঘেরে মাছের চাষ করি। ভেবেছিলাম এই মাছ অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। লাভ হবে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো। কিন্তু মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় এই স্বপ্ন এখন শেষ। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কিভাবে সংসার চলবে সেই চিন্তায় দিশেহারা । সরকারি সহযোগিতা না পেলে মরণ ছাড়া আমার আর কোন গতি থাকবে না। শুধু দীনবন্ধু নয় তার মত একই অবস্থা টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তত সহস্রাধিক মাছ চাষীর।
তাড়ালই গ্রামের আরেক মৎস্যচাষী ভবসিন্ধু গাইন বলেন, আমার সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সংসারের অভাব কাটাতে ১৭ বিঘা ঘেরে কার্প, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করি। মাছের যে সাইজ হয়েছে তা ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। এতে আমার অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমাল আমার সব কেড়ে নিয়েছে। মাছ হারিয়ে এখন চোখে-মুখে শস্যের ফুল দেখছি।
মৎস্যচাষী অরবিন্দু গাইন ও অর্চনা গাইন দম্পত্তি বলেন, পরিবারের অভাব অনটন মোচন করতে মাছ চাষ করেছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রেমালের তাণ্ডবে মাছের ঘের ভেসে গেছে । এখন আমার ঘেরে দশ হাজার টাকার মাছও নেই । সরকার যদি এখন আমাদের দিকে না তাকায়, তাহলে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোন রাস্তা নেই ।
অপর মাছ চাষী অমৃত গাইন ও খোকন গাইন বলেন, নিজেদের জমানো টাকা ধার দেনা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে লাভের আশায় মাছ চাষ করেছিলাম। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব লাভের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে। অনুদান দিয়ে আমাদের আবার মাছ চাষের সুযোগ করে দেওয়া জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমাদের পথে বসতে হবে।
গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন কুমার নন্দী জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অতিরিক্ত জোয়ার ও বৃষ্টিপাতে গোপালগঞ্জ জেলার সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার মাছের ১ হাজার ৫১১টি ঘের ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া ঘেরের মোট আয়তন ৬১০ হেক্টর। এখান থেকে ৬’শ ৬৬ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে ৫৯৭ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছ, চিংড়ি ৬৮ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন, পোনা ২৯ লাখ পিস ও চিংড়ি পিএল ৬ দশকিম ৩১ লাখ পিস । এতে জেলার সহস্রাধিক চাষীর অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের সহায়তা করার জন্য সেখানে সুপারিশ করা হয়েছে। সরকার কোন বরাদ্দ দিলে তা চাষীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত