ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ‘অসঙ্গতি’ এবং তা নিয়ে প্রশাসনের গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন পরাজিত ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে এক সাক্ষাতের পর তারা সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন।
এ সময় আবিদুল ইসলাম খান বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সুস্থ রাজনীতি চর্চা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্বাচন অসঙ্গতি থাকলেও আমরা তাৎক্ষণিক কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে যাইনি। আমরা সুস্থ ধারার রাজনীতিকে অনুসরণ করেছি এবং অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়-প্রশাসনকে সহায়তা করেছি ও অভিযোগ দিয়েছি। আমরা প্যানেলগতভাবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে করেছি, মধুর ক্যান্টিনে গতকাল সোমবার ডাকসুর ১১টি অভিযোগ সামনে আনি। অথচ আজ এসে জানতে পারি সেই বিষয়ে উপাচার্য-প্রক্টর না-কি কনসার্ন না। নীলক্ষেত যে ব্যালট পাওয়া যাওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে, এই ব্যালটে অনেকেই নির্বাচিত ও পরাজিত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলছেন, নীলক্ষেতে এই ব্যালটের যাওয়ার সুযোগ নেই। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে এই ব্যালটগুলো কোথা থেকে আসল সেই বিষয়ে পরিষ্কার অবস্থান জানাতে হবে এবং নির্বাচনের দিন ভোটার উপস্থিতি যেন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং এই অভিযোগগুলো এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক সপ্তাহ আগে যেই আশ্বাস দিয়েছে, আজও সেই একই আশ্বাস দিয়েছেন।
এ সময় উমামা ফাতেমা বলেন, অভ্যুত্থানের পর দীর্ঘ ৬ বছর পর ডাকসু নির্বাচন পেয়েছি এবং অবশ্যই এই নির্বাচন নিয়ে কথা হবে, বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। এই জায়গা থেকে আমরা যারা প্রার্থী রয়েছি অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তাদের চাওয়া হলো যে নির্বাচনই হোক না কেন তা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ থাকতে হবে। ৯ সেপ্টেম্বরের ডাকসু নির্বাচনে সবার মধ্যে ভালো একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হলেও অনেক প্রার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছে। এর মধ্যে ব্যালট পেপার গাউসুল আজম মার্কেটে পাওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো উত্তর দিতে পারেনি। পাশাপাশি ভোটের দিনে প্রার্থীরা ভোটার উপস্থিতির তালিকা চেয়েছিলেন, প্রশাসন থেকে এই তালিকা দেয়া হয়নি। আমরা নানা অভিযোগ জানিয়ে আসলে নির্বাচনের ১৫ দিন হয়ে গেলেও তার প্রোপার উত্তর দেয়া হয়নি। আমরা উপাচার্য স্যারের সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছি যেন অতিদ্রুত তারা এ অভিযোগগুলোর জবাব দেন।
আব্দুল কাদের বলেন, নির্বাচিতদের নিয়ে আমাদের কোন কনসার্ন নেই। আমাদের কনসার্ন হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও তাদের কার্যক্রম নিয়ে। শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বিষয় নিয়ে সন্দিহান, তারা কয়েকটি বিষয় আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়গুলো জানতে চায়। বিগত কয়েকদিন আমরা ফরামালি অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু আমাদের একটা বিষয় মনে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। এমন গড়িমসিতে শিক্ষার্থীদের মনে শঙ্কার জায়গাটি তৈরি হচ্ছে। আমরা চাই, অতিদ্রুত অভিযোগগুলের বিষয়ে তারা সুস্পষ্ট ব্যাখা প্রদান করুক।
এদিকে, সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে যেই অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলোর উত্তর নির্বাচন কমিশন দেবে। ডাকসু নির্বাচনে আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ দেখতে পেয়েছি; পোলিং এজেন্ট, সাংবাদিকসহ সবাই ভোট গণনার সময় একসঙ্গে ছিলেন এবং সেগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। যেই দাবিগুলো আনা হয়েছিল সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই, নির্বাচন কমিশনের উচিৎ হবে তাদের সহযোগিতা করা ও উত্তর দেওয়া।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত