প্রায় এক যুগ ধরে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় নিজ ঘরের বিছানায় ছটফট করছেন দিনমজুর স্বামী মো. মান্নান মোল্যা। স্বামী রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে পাঁচ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন স্ত্রী ছালেহা বেগম। এমন অবস্থায় ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন সন্তান মো. শাহাদাত মোল্যা (২৫)। এরই মধ্যে ভ্যান চালিয়ে তিন বোনেরও বিয়ে দেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কিছুদিন পর (গত ৮ বছর আগে) ছিনতাইকারীরা শাহাদাতকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে তার সেই অটোভ্যানটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এতে নিজের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ভ্যানটি হারিয়ে অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। একপার্যায় গত ১৭ মাস বাড়ি থেকে বের হয়ে যান সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ভ্যানচালক শাহাদাত। এরপর আর বাড়িতে ফিরে আসেনি তিনি। এদিকে, অসুস্থ স্বামীকে ঘরে রেখে বর্তমানে নিখোঁজ সন্তানের খোঁজে সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন মা ছালেমা বেগম। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও তার ছেলের সন্ধান না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।
শুক্রবার সকালে ছালেহা বেগমকে তার ছেলের ছবি আর একটি নিখোঁজ জিডির কপি ব্যাগে করে নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা সদরে। এ সময় ছেলে নিখোঁজসহ তার পরিবারের এসব তথ্য জানিয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। ছালেহা বেগম সালথা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী গ্রামের অসুস্থ দিনমুজুর মান্নান মোল্যার স্ত্রী।
ছালেহা বেগম আরো বলেন, মাঠে আমাগো এক কাঠা জমিও নাই। অনেক বছর ধরে আমার স্বামী রোগী হয়ে ঘরে শুয়ে রয়েছে। সে কোনো কাজ-কাম করবার পারে না। আমার তিন মাইয়া ও দুই ছাওয়াল। বড় ছাওয়ালডা বিয়া কইরা আলাদা সংসার পাতছে। আমাদের কোনো খবর রাখে না। ছোট ছেলে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতো। সে তিন মাইয়াকেইও বিয়ে দিয়েছে। কিন্তু গত ৮ বছর আগে আমার ছেলেডারে মাইরা তার ভ্যানখান নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
এরপর আমার ছেলেডা পাগলের মতো হয়ে গত ১৭ মাস আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত আমার ছেলেডার কোনো খোঁজ পাই নাই। থানায় ডিজি করেছি, প্রেস ক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের জানাইছি। খেয়ে না খেয়ে সারাদেশের বিভিন্ন মাঝার ও শহরে গিয়ে তাকে খুঁজেছি। কোথাও তার দেখা পাই নাই। আমার ছেলেডারে আপনারা খুঁজে দেন। নইলে আমি বাঁচব না, ছেলেডার জন্যি মারা যাবো।
বিডি প্রতিদিন/এএ