মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ার ও গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের লাখো মানুষ। ডুবে গেছে আমনের বীজতলাসহ ফসলি কৃষি জমি, রাস্তাঘাট, ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর ও জলাশয়, নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে গেছে পানি।
চারিদিকে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে এখন। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, বিভিন্ন খাল নদী দখল, বাঁধ দিয়ে পানির গতিরোধ ও পরিকল্পনাহীন ড্রেনেজ ব্যবস্থায় এবং অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সচেতনরা। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মেঘনা উপকূলের বাসিন্দারা।
জানা যায়, টানা বৃষ্টি ও মেঘনায় অস্বাভাবিক হারে জোয়ারের পানি ঢুকছে লোকালয়ে। জেলার কমলনগর, রামগতি, সদর, রামগঞ্জ ও রায়পুরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এখন প্লাবিত। হাঁটু ও কোমর পরিমাণ পানিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। অনেকে রান্না বান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এসব এলাকার অনেক স্থানে পুকুর ডুবে গেছে, আক্রান্ত হয়েছে আমনের বীজতলাসহ ফসলি কৃষি জমি, ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ও কৃষিখাতে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন জানান, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে জেলায় ১৭ হাজার ৫০০ পুকুর-জলাশয় ভেসে গেছে, চাষিদের বিভিন্ন প্রকার ছোট বড় অন্তত ৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ বের হয়ে গেছে। এতে করে ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থা থাকলে তা বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন জানান, বন্যায় আমন ধানের বীজ তলা ১৪৮৬ হেক্টর, আমন ধান ধান ২৬১৮ হেক্টর, আউশ ধান ২৯৬৩ হেক্টর ও শরৎকালীন ৪৪৩ হেক্টরের সবজি আক্রান্ত হয়েছে। পানি আরও বেড়ে ২ দিন থাকলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের জন্য বীজ সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, বিভিন্ন খাল নদী দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, রাস্তা নির্মাণে পানির গতিরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে পরিকল্পনাহীন ড্রেনেজ ব্যবস্থায় এবং অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন উদাসীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জমান খান জানান, অবৈধভাবে খাল ও নদী দখলের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে, বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে, তবে কিছু স্থানে এখনো বাঁধ অরক্ষিত থাকায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই