বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট আরসি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে অপসারণ দাবিতে তার কক্ষে তালা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, তার অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। মঙ্গলবার তার কক্ষে তালা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে সহকারী অধ্যাপক ইলিয়াস শাহ ফকিরের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি।
তিনি আরো জানান, সরকারি চাকরিতে ইচ্ছে করলেই পদত্যাগ করা যায় না। বদলি হওয়ারও সুযোগ নেই। তাই সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।
পাতারহাট আরসি কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম নানা অনিয়ম, অপকর্ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। তার বিরুদ্ধে শুধু শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষকরাও অতিষ্ঠ। তাই তার অপসারণের দাবিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। তার অনিয়ম, অপকর্ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও স্মারকলিপি দওেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণ ও অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার তার কক্ষে তালা দেওয়া হয়েছে। বুধবার বৈরি আবহাওয়ার কারণে কোনো কর্মসূচি পালন হয়নি। আবহাওয়া ভালো হলে আবারো কর্মসূচি পালন করা হবে।
শিক্ষার্থী এমাজউদ্দিন আহমেদ জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে। আগামী রবিবার মেহেন্দিগঞ্জের প্রধান এলাকা তেমুহুনি চত্ত্বর অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হবে।
সহকারী অধ্যাপক ইলিয়াস শাহ ফকির জানান, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে আমাকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাও কোনো সনদ দেওয়ার জন্য।
ডিগ্রি পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীর কাছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের টাকা দাবি করা নিয়ে একটি ভিডিও ২৪ জুন ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক ছাত্রী উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের কাছে জানতে চায় পরীক্ষার প্রবেশপত্রের জন্য কেন ৫০০ টাকা দিতে হবে।
জবাবে উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম বলেন, টিএনওর সম্মানী পাঠাতে হবে, ডিসির সম্মানী পাঠাতে হবে, এডিসির সম্মানী পাঠাতে হবে। দুইজন ট্যাগ অফিসারকে সম্মানী দিতে হবে।
৫০০ টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র নিতে না পারলে শিক্ষার্থীরা কি করবে এমন প্রশ্নের জবাবে উপাধ্যক্ষকে বলতে শোনা যায়, এটা তোমার উইশ। তুমি আমার সাথে যুদ্ধ করতে নামো, যুদ্ধ কন্টিনিউ করতে পারো। কোনো সমস্যা নেই। সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার তুমি যুদ্ধ করে যেতে পারো। যুদ্ধ করা তোমার অধিকার।
ছাত্রীটি সবার এতো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য থাকে না বলে জানালে এই শিক্ষক বলেন, এবিলিটির কথা বইলো না। যারা গরিব তারা টাকা দিয়া গেছে, রিকশাওয়ালার পোলায় আইয়া টাকা দিয়া গ্যাছে। যারা ধনী সামর্থ্যবান তারা এসে যুদ্ধ করে। প্রিন্সিপালকে কিভাবে হেনস্থা করা যায়।
তিনি ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যে অ্যান্ড্রয়েড সেটটা তুমি ব্যবহার করো, আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন ওইটা তো কল্পনাও করতে পারি নাই। তুমি গরিব হইলা কোনখান দিয়া। খালি আমার উপর দায় চাপানো, আমার বেতনের টাকা দিয়া তো তোমাগো জন্য কিছু করতে পারবো না। আমার তো সংসার আছে।
তার এমন বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হবার পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।