গাইবান্ধার সাঘাটায় উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের যোগীপাড়া গ্রামে দীর্ঘদিন থেকে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে ফুফু অজেদা বেগমকে (৭৮) মারপিটের অভিযোগ উঠেছে ভাতিজা রফিকুল ইসলাম রতন (৩৫) ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী অজেদা বেগম ভাঙা পা নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন এক মাস ধরে। শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা অভিযোগও রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি ভুক্তভোগীর।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে গত ২৯ আগস্ট সকালে অজেদা বেগম তার ভাই শহিদুল ইসলামের বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ছোটবোন আঞ্জুয়ারা বেগমের বাড়িতে যাওয়ার সময় রফিকুল ইসলাম রতন ও তার সহযোগীরা হাতে লাঠিসোঁটা, লোহার রড, দেশীয় অস্ত্রসহ অজেদা বেগমকে ধাওয়া করে। প্রাণ ভয়ে অজেদা বেগম একই এলাকার শাহ আলমের বসতবাড়িতে পৌঁছালে আসামি রতনসহ তার ৫-৬ জন সহযোগী তাকে ঘিরে ফেলে এবং এলোপাতাড়ি মারপিট করে ও শ্লীলতাহানি ঘটায়। ভাতিজা রফিকুল ইসলাম রতন তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ফুফু অজেদা বেগমের বাম পায়ে সজোরে আঘাত করে ও গলাটিপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করে। তার ডাক-চিৎকারে পরে স্থানীয়রা আহত অজেদা বেগমকে উদ্ধার করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরপর থেকে ভাঙা পা নিয়েই সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।
সাঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মেহেদী হাসান তন্ময় বলেন, অজেদা বেগম নামে এক নারী ভাঙা পা নিয়ে এক মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার পায়ের ভাঙা অংশে ইনফেকশন হয়েছে। তাকে আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।
জানা গেছে, যোগীপাড়া গ্রামের আসমত উল্লাহ ব্যাপারীর মৃত্যুর সময় চার ছেলে ও পাঁচ কন্যাসহ অনেক জমিজমা রেখে যায়। তার মৃত্যুর পর সেই জমি ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে আপন ভাই ভাতিজাদের মাঝে কলহ বিবাদ চলতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ-দরবারও হয়েছে। কিন্তু কোনো সূরাহা হয়নি। বোনদের জমির অধিকার চাওয়া-পাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় সহোদর ভাই আব্দুর রাজ্জাক ও আনছার আলীর সঙ্গে। এরই জের ধরে রাজ্জাক ও আনছার আলীর পুত্র রফিকুল ইসলাম রতন এবং শফিকুল ইসলাম ফুলমিয়াদের হাতে মাঝে মধ্যেই মারপিটের শিকার হতে থাকে ফুফুরা। এর প্রতিবাদ করায় ছোটো ভাই শহিদুল ইসলামকে বিভিন্ন সময় মারপিট করে। প্রাণ ভয়ে পবিবার নিয়ে বর্তমানে বাড়ি ছাড়া শহিদুল।
ভুক্তভোগী অজেদা বেগম বলেন, বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তি নিতে গেলেই আমাদের পাঁচ বোনের উপর হুমকি ও অমানবিক নির্যাতন করে দুই ভাইয়ের পরিবারের লোকজন। এবার আমার পা ভেঙে দিয়েছে। তিনি এর বিচার চান।
শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাকে হত্যার হুমকি দেয়, রাতের বেলায় দরজা-জানালায় হামলা করে, ভয়েই বাড়িতে থাকতে পারি না। তিনি বলেন, এর আগেও অনেক অভিযোগ দিয়েছি, মামলাও হয়েছে। কিন্তু শুধরানো যায়নি রতনকে। আবারও আমার বড় বোন অজদো বেগমকে মারপিট করেছে। অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
আরেক ভুক্তভোগী আঙুর বেগম বলেন, আমাকেও রতন মারপিট করেছে। আমরা সকল বোন মিলে ভাতিজা ও ভাইদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভাতিজা রফিকুল ইসলাম রতন বলেন, ফুফুরা কোনো সম্পত্তি পায় না। সেদিন এমনিতে হুড়োহুড়ি করতেই তার পা ভেঙে গেছে। এখানে আমার কোনো দোষ নাই।
এ ব্যাপারে সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম বলেন, অভিযোগটা কোন অফিসারকে দেওয়া হয়েছে তা দেখতে হবে। খতিয়ে দেখে বিষয়টি জানানো হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই