শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
গল্প

রোদপরী

দিলরুবা নীলা

রোদপরী

কে গো তুমি সকাল সকাল আমার ফুলবাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছ।

আমি রোদপরী, আমাকে চেন না?

ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে তার নিজ হাতে গড়া ফুলের বাগানে এসে দাঁড়াতেই ওশিন দেখে কে যেন তার বাগানে ঘুর ঘুর করছে।

ও তাই তো তোমাকে তো পরী পরীই লাগছে। তা তুমি এখানে কী করছ?

আমি তোমার বাগানে রোদ দিচ্ছি, জান না রোদ না পেলে গাছ মরে যায়।

হ্যাঁ তা তো জানি।

গতকালই তো বিজ্ঞান স্যার সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। গাছেদের বেঁচে থাকতে কী কী দরকার।

তুমি কি রোজ আমার বাগানে রোদ দাও?

অবশ্যই দিই। শুধু তোমার বাগানে কেন আশপাশের প্রতিটি বাগানেই আমি রোদ দিই। এ ছাড়া এখন তো শীতকাল। তোমার এলাকার আশপাশে অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাদেরও আমার ঘুরে ঘুরে রোদ দিতে হয়।

গরম কাপড় নেই মানে?

নেই মানে নেই।

ওরা গরম কাপড় কিনে না কেন?

কিনবে কী করে? ওদের টাকা পয়সা নেই। গরিব তাই।

কী বলো?

হ্যাঁ ঠিকই বলছি। অনেক মানুষ আছে যারা টাকা-পয়সার অভাবে গরম কাপড় কিনতে পারে না। তাদের দিনের বেলায় রোদ দেওয়াই আমাদের কাজ।

তোমাদের মানে? তোমাদের দলে আরও আছে।

হ্যাঁ অবশ্যই আছে। আমাদের টিমের নাম রোদ টিম। এই টিমের অনেক সদস্য। একেক সদস্য একেক এলাকায় রোদ দেয়।

বাহ্ চমৎকার তো।

তুমি তো দিনে ওদের রোদ দাও। রাতের বেলায় ওরা কী করে?

আর বলো না, রাতে তো রোদ দেওয়া যায় না। রাতে ওরা কিছুক্ষণ খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের তাপ নেয় তারপর গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকে।

আহা, তাই নাকি?

হ্যাঁ তাই। তোমার সাথে এত বকবক করার সময় নাই বাপু। আমার অনেক কাজ। বাগানে রোদ দিতে হবে। স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে রোদ দিতে হবে। রাস্তার পাশে ছোট ছোট ঘরগুলো আছে। ওগুলোর সামনে রোদ দিতে হবে।

আমাকে নেবে তোমার সাথে, রোদপরী?

আমি একটু ঘুরে ঘুরে দেখতে চাই। কারা শীতে কষ্ট পাচ্ছে।

আচ্ছা চলো।

ওশিন রোদপরীর পাখায় ভর করে উড়তে থাকে। রোদপরী তাকে নিয়ে যায়। রেলস্টেশনে, রাস্তার পাশের বস্তিগুলোর সামনে।

সে সব জায়গায় ওশিনের মতো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। ওশিনের দাদা-দাদুর মতো বয়স্ক লোকজন, সব কাগজ পুড়িয়ে আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত, সবাই শীতে কাঁপছে।

ওশিনের চোখে পানি এসে যায়। এত কাছে ওর এসব মানুষ শীতে এত কষ্ট করছে। আর ওশিন দিব্যি ৮/১০টা সোয়েটার ঘরে নিয়ে বসে আছে।

আবার আম্মুর কাছে বায়না ধরেছে নতুন সোয়েটার কিনবে। আজই ওদের মার্কেটে যাওয়ার কথা।

ওশিন মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় আজ সে অবশ্যই মার্কেটে যাবে। অনেক সোয়েটার কিনবে। তবে তা নিজের জন্য নয়। আশপাশে যারা শীতে কষ্ট পায় তাদের জন্য। এই ওশিন উঠে পড়ো, আর কত ঘুমাবে? সকাল ৮টা বাজে। উঠে দেখ তোমার ফুলের বাগানে রোদ ঝিলমিল করছে। মায়ের ডাকে ওশিনের ঘুম ভাঙে।

দৌড়ে বাগানে যায়। দেখে বাগানে ঝকঝকে রোদ গাল ভরে হাসছে। চোখ মেলে কোথাও আর রোদ পরীকে দেখে না।

স্কুল থেকে ফিরে এসে ওশিন আম্মুর সাথে মার্কেটে যায়। ব্যাগ ভর্তি সোয়েটার কিনে। প্রতিটি সোয়েটার কেনার সময় তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে শীতের প্রকোপে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা কিছু শিশুর মুখ।

সে নিশ্চিত এ সোয়েটার হাতে পাওয়ার পর তাদের চোখে রোদের ঝিলিক থাকবেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর