শুরুতে যখন পৃথিবী নতুন ছিল এবং প্রাণীরা সবে মানুষের জন্য কাজ শুরু করেছিল তখনকার কথা। একটি উট ছিল। সে কাজ করতে অনিচ্ছুক ছিল। তাই নির্জন মরুভূমির মাঝখানে বসে থাকত একাকী। বসে বসে সে গাছের শুকনা ডাল, কাঁটা এসব খেত। কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই সে চরম বিতৃষ্ণা প্রকাশ করে বলত-হাম্প, যার অর্থ কুঁজ।
সোমবার সকালে ঘোড়া পিঠে বোঝা নিয়ে অলস উটের কাছে গিয়ে বলল,
-হে উট, এসো এবং আমাদের মতোই হাঁটো, কাজ কর।
উটটি বিতৃষ্ণভাবে বলল-কুঁজ!
ঘোড়া চলে গেল এবং তার মালিককে বলল উটের বিতৃষ্ণার কথা।
এরপর একটা কুকুর এলো, তার মুখে একটা লাঠি। কুকুর উটকে বলল,
-হে উঠ, উঠে এসো এবং আমাদের মতো জিনিসপত্র বহন কর।
উটটি বরাবরের মতোই বিরক্তি প্রকাশ করল। কুকুর ফিরে গিয়ে মালিককে সে কথা জানাল।
সবশেষে এলো ষাঁড়। তার কাঁধে জোয়াল। সে উটকে অনুরোধ করে বলল,
-হে উট, এসো, তুমি আমাদের মতো জমি চাষ কর।
কিন্তু উট বিরক্ত হলো। ষাঁড় ফিরে গিয়ে মালিককে সে কথা বলল।
দিনের শেষে মালিক লোকটি ঘোড়া, কুকুর এবং ষাঁড়কে ডেকে বলল,
-আমি তোমাদের জন্য খুবই দুঃখিত। মরুভূমির মাঝখানে বসে থাকা অলস উটটি কাজ করতে চায় না, এ ব্যাপারে সে কোনো কথাও শুনতে চায় না। সুতরাং তাকে ওখানেই রেখে দিচ্ছি। দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সংগত কারণেই তোমাদের দ্বিগুণ কাজ করতে হবে।
এ কথা শুনে ঘোড়া, কুকুর এবং ষাঁড় তিনজনের মনে রাগ হলো। তারা উটের বিরুদ্ধে কিছু করতে চায়। উটকে এ রকম অলসভাবে বসে থাকতে দিতে চায় না। মরুভূমির ধারে একটি পঞ্চায়েত ছিল। সেখানে অবাধ্যদের বিচারকার্য হতো। বিচার করতেন মরুভূমির মালিক এক জিন। উটটিও জাবর কাটতে কাটতে গেল সেই পঞ্চায়েতে। ঘোড়া, কুকুর আর ষাঁড়কে সেখানে দেখে বিদ্রƒপের হাসি হেসে চলে গেল।
মরুভূমির প্রধান জিন যে কোনো মানুষ এবং প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারত। ওরা জিনের কাছে বিচার দিল।
ঘোড়া বলল,
-কারও কি কাজ না করে বসে বসে খাওয়ার অধিকার আছে?
জিন বলল,
-নিশ্চয়ই না।
-মরুভূমির মাঝখানে যে লম্বা গলা আর লম্বা পায়ের একটা জিনিস বসে আছে সে তিন দিন ধরে কোনো কাজই করছে না।
কুকুর বলল, সে সামান্য নড়াচড়াও করছে না।
ষাঁড় বলল, সে হালচাষও করবে না।
-ওহ! ওটা তো আমারই উট। কাজের কথা বললে সে কী বলে?
-সে বিতৃষ্ণভাবে বলে ‘কুঁজ’।
জিন বলল,
- ঠিক আছে, তোমরা এক মিনিট অপেক্ষা কর। আমি তাকে কুঁজই দিব।
জিন তার ধুলোর চাদরে নিজেকে গুটিয়ে নিল। তারপর সে মরুভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে গেল। গিয়ে দেখে উটটি একটা পুকুরের পানিতে তাকিয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখছে। জিন বলল,
-আমার বন্ধু, তোমার ব্যাপারে আমি এসব কী শুনছি? তুমি নাকি কোনো কাজ করছ না? এ কথা বলে জিনটি তার থুঁতনিতে হাত ঠেকিয়ে বসে পড়ল। উটটি পুকুরে তার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়েই আছে। জিন আবার বলল,
-শুধু তোমার অলসতার কারণে ওদের তিনজনকে অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে।
উট সেভাবেই নিজের প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে রইল। জিন বলল,
-আমি চাই তুমি কাজ কর।
উট বিতৃষ্ণা ভরে বলে উঠল-কুঁজ।
এ কথা বলতে না বলতেই উটটি দেখতে পেল তার কাঁধ ফুলে যাচ্ছে এবং ফুলতে ফুলতে বড় একটা কুঁজ হয়ে গেল।
জিন বলল,
-তুমি কি এটা দেখতে পাচ্ছ? এটা তোমারই সেই কুঁজ, যা তুমি নিজেই অর্জন করেছ কোনো কাজ না করে। এখন তুমি কাজে যেতে পার।
উট বলল,
-কিন্তু পিঠে এত বড় কুঁজ নিয়ে আমি কাজ করব কীভাবে?
-তুমি তিন দিন কোনো কাজ করনি। এখন তুমি তিন দিন কাজ করবে না খেয়ে। তিন দিন কোনো খাবার পাবে না।
-কিন্তু কীভাবে...?
-তোমার পিঠের কুঁজ তোমাকে শক্তি জোগাবে। কুঁজটি বরং তোমার জন্য উপকারীই হবে। যা হোক, তুমি এই মরুভূমি থেকে বেরিয়ে আসো এবং ওদের তিনজনের সঙ্গে কাজে যোগ দাও।
উটটি তিনজনের সঙ্গে কাজে যোগ দিতে চলে গেল।
সেদিন থেকে উঠ তার পিঠে কুঁজ বয়ে বেড়াচ্ছে। তবে কুঁজটা তাকে আর খারাপ অনুভূতি দেয় না।