অনেক বছর আগের কথা। পাহাড়ঘেরা এক ছোট্ট গ্রামে থাকত এক দুষ্ট ছেলে। নাম ইমতিয়াজ। সে বেজায় দুষ্ট, কিন্তু মনটা ছিল স্বর্ণের মতো পরিষ্কার। তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল পাহাড়ের দিকে চেয়ে রঙিন মেঘ খুঁজে বের করা। সে বলত, ‘ওই মেঘের আড়ালে কিছু একটা লুকিয়ে আছে, আমি জানি!’
এক দিন বৃষ্টি নামল হালকা সুরে। ইমতিয়াজ ছাতা না নিয়ে ছুটে গেল খোলা মাঠে। হঠাৎ সে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল এক অদ্ভুত রংধনু। সেটা সাধারণ রংধনুর মতো নয়, এই রংধনুতে ছিল আটটা নয়, বরং তেরোটি রং! তা ছাড়া সেটি মাটিতে নেমে এসে একদম তার চোখের সামনে শেষ হয়েছে! বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে সে দেখল, রংধনুর শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুতদর্শন মানুষ-লম্বা গাউন, চকচকে জুতো, মাথায় রঙিন পাগড়ি।
লোকটা বলল, ‘আমি আছর আল-জিন। জিনের রাজকোষের রক্ষক। এই রংধনু পথ তোমাদের চোখে পড়ে না, শুধু যাদের কল্পনা প্রবল, কেবল তারাই দেখতে পায়।’
ইমতিয়াজ ভয় না পেয়ে বলল, ‘তুমি জ্বিন? তাহলে তো তুমি ভয়ংকর হওয়ার কথা!’
আছর হেসে বলল, ‘সব জিন ভয়ংকর নয়। আমি স্বপ্ন রক্ষাকারী জিন। তুমি সাহসী ও কল্পনাপ্রবণ-তোমার জন্য আজ খুলে গেছে রংধনু পথ।’
ইমতিয়াজ বলল, ‘রংধনু পথটা যায় কোথায়?’
‘চলো, তাহলে আমি দেখাই,’ বলেই আছর তার হাত ধরল। রংধনুর ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করল তারা। পা রাখতেই ইমতিয়াজের মনে হলো সে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। চারপাশে রং ঝলমল করছে, প্রতিটি রং যেন আলাদা একটি সুর বাজাচ্ছে। লাল রং বাজাচ্ছে ঢাক, কমলা বাজাচ্ছে বাঁশি, নীল রংয়ে বেজে উঠছে বেহালা।
রংধনুর মাঝপথে হঠাৎ একটা দরজা দেখা গেল। দরজায় লেখা-‘কল্পনার রাজ্য।’ আছর বলল, ‘এই দরজা খুলে গেলে যা দেখবে তা আর কেউ কোনোদিন দেখেনি।’
দরজা খুলতেই তারা ঢুকে পড়ল এক আশ্চর্য জগতে। সেখানে পাখিরা কথা বলছে, গাছেরা হাঁটছে, মেঘগুলো বাদামি রংয়ের আইসক্রিম হয়ে আকাশে উড়ছে! এক শিমুল গাছ হাত নেড়ে বলল, ‘ওহে ইমতিয়াজ, দেরি করে ফেললে!’
ইমতিয়াজ চমকে উঠে বলল, ‘আপনি আমাকে চেনেন?’
‘তোমার কল্পনায় বাস করি। তুমি যখনই গল্প বানাও, আমরা প্রাণ পাই,’ শিমুল গাছ হেসে বলল।
এরপর একে একে তার সব কল্পনার চরিত্র- ডানাওয়ালা বিড়াল, টুপি-পরা মাছ, রোলার-স্কেটিং করা ছাগল-সব এসে হাজির।
আছর বলল, ‘এই হলো রংধনু পথের শেষ। এখান থেকে কল্পনার শক্তি তোমার হাতে চলে যাবে।’
ইমতিয়াজ বলল, ‘আমি কি এখন গল্প বানাতে পারব যেটা বাচ্চারা শুনে রংধনু দেখতে পাবে?’
আছর মাথা নাড়ল, ‘ঠিক তাই। তবে একটা শর্ত আছে-তুমি কল্পনাকে কখনো খাটো করবে না। জাদু হারায় তখনই, যখন বিশ্বাস হারিয়ে যায়।’
ইমতিয়াজ রাজি। বলল, ‘আমি কল্পনার যত্ন নেব!’
হঠাৎ তার চারপাশ ঘুরে উঠল, সব আলো মিলে গিয়ে যেন তাকে গিলে ফেলল।
তারপর সে নিজেকে আবিষ্কার করল তার নিজের খাটে, মাথার নিচে ভেজা বালিশ। সে স্বপ্ন দেখছিল?
কিন্তু... জানালার পাশে রাখা জুতো জোড়ায় একটা চকচকে রঙিন পালক। আর বইয়ের ওপর রাখা একটা ছোট্ট কাগজে লেখা-
‘রংধনু পথ শুধু সাহসীদের জন্য। আছর আল-জিন’।