আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমতির দিকে থাকলেও পণ্যটি আমদানিতে আরেক দফা ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশে চিনি পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সংগঠন সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থাটি সরকারকে জানিয়েছে, চিনি আমদানিতে তাদের যে কর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে এর মেয়াদ না বাড়ালে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
স্থানীয় বাজারে চিনির দাম কমানোর লক্ষ্যে মিল মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরে পণ্যটির ওপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দেওয়া এ শুল্ক সুবিধার মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ মাসেই (২৮ ফেব্রুয়ারি)। এর পর থেকে আবার ৩০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্যটি আমদানি করতে হবে।
চিনি পরিশোধনকারী মিল মালিকদের দাবি, এ বছর রমজান শুরু হবে এপ্রিলে। রোজা সামনে রেখে যেন এ ট্যাক্স সুবিধা আরও বাড়ানো হয়। শুধু তাই নয়, ৩০ শতাংশ থেকে রেগুলেটরি ডিউটি কমিয়ে যেটি ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, সেটি আরও কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা এ সুবিধা আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। ২০ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিনির শুল্ক কমানোর এ প্রস্তাবটি পাঠান অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম রহমান।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তাদের (পরিশোধনকারী মিল মালিক) ১০ শতাংশ ট্যাক্স কমিয়ে যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল সেটিই তো বাস্তবায়ন করেননি। নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখনো চিনির কেজি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে এমন কোনো তথ্যও তো আমাদের কাছে নেই।’ সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর চিনির নতুন দাম নির্ধারণ করে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তখন জানানো হয়, প্রতি কেজি খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭৪ আর প্যাকেটজাত ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গত পাঁচ মাসে এ দামে দেশের কোথাও চিনি বিক্রি হয়নি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কমবেশি ৮০ টাকায় এবং প্যাকেটজাত ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের তথ্যানুযায়ী দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায়।
সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘প্রতি বছর দেশে চিনির মোট চাহিদা ১৫ থেকে ১৭ লাখ টন। এর মধ্যে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন চিনি আসত রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা থেকে। দেশি মিলগুলোর উৎপাদন কমতে কমতে এখন ৩০ হাজার মেট্রিক টনে নেমে গেছে। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় সরকার টিসিবির মাধ্যমেও কিছু চিনি আমদানি করে। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ চিনির জোগান আসে সরকারিভাবে। বাকি চিনির পুরোটাই সরবরাহ করে দেশের গুটিকয় কোম্পানি। এ খাতে আমরা নতুন উদ্যোক্তাও পাচ্ছি না।’
চিনি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, ‘গুটিকয় মিল মালিকের হাতে চিনির বাজার আটকে গেছে। ফলে তারা খেয়াল-খুশিমতো পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নভেম্বরের পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমতির দিকে। ফলে নতুন করে আর দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। বরং ট্যাক্স কমালে এ সুবিধা যাবে মিল মালিকদের পকেটে। ভোক্তার কোনো লাভ হবে না।’