শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আল কোরআন অনুশীলনের মাহাত্ম্য

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

আল কোরআন অনুশীলনের মাহাত্ম্য

মহাগ্রন্থ আল কোরআন আল্লাহতায়ালা কর্তৃক মানব জাতির হেদায়তের জন্য নাজিলকৃত সর্বশেষ আসমানি কিতাব। ২৩ বছরে যখন যতটুকু প্রয়োজন জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এটা অবতরিত হয়। ৩০ পারা ও ১১৪টি সূরায় বিন্যস্ত এ গ্রন্থ মানব জীবনের ইহজাগতিক শান্তি, অগ্রগতি ও পারলৌকিক মুক্তির সোপান। আল কোরআন মানবম-লীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে টেনে আনে। ইমান-আমল, আখলাক-আচরণ, নীতিনৈতিকতা, পারিবারিক শৃঙ্খলা, হালাল জীবিকা, সামাজিক রীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, মানবসেবা, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য, হকের পক্ষে অবস্থান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি, হাশর-নশর, জান্নাত-জাহান্নাম, পরকালীন জবাবদিহি ইত্যাদি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিক কোরআনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। প্রয়োজনীয় অসংখ্য আদেশ ও নিষেধে সমৃদ্ধ এই ঐশীগ্রন্থ। বরকতময় এ গ্রন্থে রয়েছে অতীতের অনেক ঘটনার বিস্ময়কর বিবরণী ও আগেকার নানা জাতিগোষ্ঠীর উত্থান-পতনের শিক্ষণীয় ইতিবৃত্ত। কিয়ামত পর্যন্ত এ গ্রন্থ বিকৃতির পঙ্কিল ছোঁয়া থেকে মুক্ত। এটা আল্লাহর ওয়াদা। আল্লাহ বলেন, ‘এ কিতাব আমি নাজিল করেছি, এ কিতাবের হেফাজতকারী স্বয়ং আমি।’ সূরা হিজর, আয়াতা ৯; সূরা ইবরাহীম, আয়াত ১। আল কোরআন আল্লাহর বাণী। চারটি পদ্ধতিতে কোরআনচর্চায় মনোনিবেশ করলে দুনিয়া ও আখিরাতের অফুরন্ত কল্যাণের দিশা পাওয়া যাবে। এক. কোরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত। এতে তনুমন আলোড়িত হয়। জান্নাতি একটি পুলকপরশ অনুভূত হয়। প্রতি অক্ষরে ১০টি নেকি। অশুদ্ধ তিলাওয়াতকারীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ নেমে আসে। দুই. কোরআনের অর্থ অনুধাবন। কোরআন বোঝার চেষ্টা না করলে মানুষ জানতে পারবে না আল্লাহর কী নির্দেশনা রয়েছে এতে। না বুঝলে আমল করা যাবে না এবং কোরআনের হকও আদায় হবে না। তিন. কোরআনে রয়েছে অনেক আদেশ ও নিষেধ। এসব আদেশ ও বিধিনিষেধের প্রতিপালন ইমানদারদের জন্য অতীব জরুরি। চার. পৃথিবীতে কোরআনচর্চার যত প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, একাডেমি, শিক্ষা কেন্দ্র ও ব্যবস্থাপনা রয়েছে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা। একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ কি প্রতি রাতে এক তৃতীয়াংশ কোরআন পড়তে সক্ষম? সাহাবিরা উত্তর দিলেন, কী করে প্রতি রাতে এক তৃতীয়াংশ কোরআন পড়ব? তিনি বললেন, “কুল হুয়াল্লাহু আহাদ” কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। যে ব্যক্তি ১০বার সূরা ইখলাস পড়বে (অর্থাৎ কুল হুয়াল্লাহু আহাদ থেকে শেষ পর্যন্ত), তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে রাজপ্রাসাদ তৈরি করে দেবেন।’ বুখারি, মিশকাত। আল কোরআনের ব্যাখ্যা হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তি-আমল। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন কোরআনের বাস্তব নমুনা।’ কোরআনে বর্ণিত হুকুম-আহকাম তিনি জীবদ্দশায় অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করে নজির স্থাপন করেন এবং সাহাবিদের অনুশীলনের নির্দেশনা দেন। স্মর্তব্য যে, আল কোরআন হচ্ছে ইসলামী আইন ও বিধির প্রথম ও প্রধান উৎস। মানুষের পক্ষে কোরআনের কোনো আয়াত বা হুকুমের পরিবর্তন বা পরিমার্জনের সুযোগ নেই, রেওয়াজও নেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কোরআন শেখে ও অন্যকে শেখায়। যার অন্তরে কোরআনের কোনো অংশ নেই সে পরিত্যক্ত-বিরান ঘরতুল্য।’ ‘যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে এবং তদনুযায়ী আমল করে, তার পিতা-মাতাকে কিয়ামতের দিন নূরের মুকুট পরানো হবে।’ বুখারি, তিরমিজি, মিশকাত।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

সর্বশেষ খবর