শিরোনাম
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রসুলুল্লাহ (সা.) কেমন ছিলেন

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

রসুলুল্লাহ (সা.) কেমন ছিলেন

প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন ছিলেন তা জানার আগ্রহ পৃথিবীর সব মুসলমানের। প্রত্যেক হৃদয়ের একান্ত কামনা, যদি সবকিছুর বিনিময়ে হলেও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জীবনে একনজর দেখতে পেতাম! প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকার-আকৃতি অনেক সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী (রা.) যখনই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতির বর্ণনা দিতেন, তখন বলতেন, ‘তিনি অত্যধিক লম্বাও ছিলেন না এবং একেবারে বেঁটেও ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন লোকদের মধ্যে মধ্যমাকৃতির। তাঁর মাথার চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না এবং সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না। বরং মধ্যম ধরনের কোঁকড়ানো ছিল। তিনি অতি স্থূলদেহী ছিলেন না এবং তাঁর চেহারা একেবারে গোল ছিল না। বরং লম্বাটে গোল ছিল। গায়ের রং ছিল লাল-সাদামিশ্রিত। চোখের বর্ণ ছিল কালো এবং পলক ছিল লম্বা লম্বা। হাড়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। গোটা শরীর ছিল পশমহীন, অবশ্য পশমের চিকন একটি রেখা বুক থেকে নাভি পর্যন্ত লম্বা ছিল। হাত ও পায়ের তালু ছিল মাংসে পরিপূর্ণ। যখন তিনি হাঁটতেন তখন পা পূর্ণভাবে উঠিয়ে মাটিতে রাখতেন, যেন তিনি কোনো উচ্চ স্থান থেকে নিচের দিকে নামছেন। যখন তিনি কোনো দিকে তাকাতেন তখন ঘাড় পূর্ণ ফিরিয়ে তাকাতেন। তাঁর উভয় কাঁধের মাঝখানে ছিল মোহরে নবুয়ত বা নবী হওয়ার অলৌকিক নিদর্শন। বস্তুত, তিনি ছিলেন খাতামুন নাবিয়্যিন (নবী আগমনের ধারাবাহিকতা সমাপ্তকারী)। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে অধিক দাতা, সর্বাপেক্ষা সত্যভাষী। তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা কোমল স্বভাব এবং বংশের দিক থেকে সম্ভ্রান্ত। যে ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ দেখত, সে ভয় পেত। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পরিচিত হয়ে তাঁর সঙ্গে মিশত, সে তাঁকে অনেক ভালোবাসতে থাকত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণাবলি বর্ণনাকারী সাহাবি এই কথা বলতে বাধ্য হন যে, আমি তাঁর আগে ও পরে তাঁর মতো সুন্দর কাউকে কখনো দেখতে পাইনি।’ তিরমিজি। অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাস্তা দিয়ে চলে যেতেন, পরে কেউ সে পথে গেলে সে অনায়াসে বুঝতে পারত যে রসুলুল্লাহ ওই পথে গমন করেছেন। আর এটা তাঁর গায়ের সুগন্ধির কারণে অথবা বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর ঘামের ঘ্রাণের কারণে।’ দারেমি। রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতি সম্পর্কে হজরত জাবির ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, ‘একবার আমি চাঁদরাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম। অতঃপর একবার তাঁর দিকে তাকালাম আর একবার চাঁদের দিকে তাকালাম। তখন তিনি লাল বর্ণের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তাঁকে আমার কাছে চাঁদের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর মনে হলো।’ তিরমিজি ও দারেমি। হজরত কাব ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো ব্যাপারে আনন্দিত হতেন তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠত। মনে হতো যেন তাঁর মুখম-ল চাঁদের টুকরো। বস্তুত, আমরা সবাই তা অনুভব করতে পারতাম।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনের দাঁত দুটির মাঝে কিছুটা ফাঁক ছিল। যখন তিনি কথাবার্তা বলতেন, তখন মনে হতো ওই দাঁত দুটির মধ্য দিয়ে যেন ঘামের আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে।’ দারেমি। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি, মনে হতো যেন সূর্য তাঁর মুখম-লে ভাসছে। আর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা চলার মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন কাউকে দেখিনি। তাঁর চলার সময় মনে হতো মাটি যেন তাঁর জন্য সংকুচিত হয়ে এসেছে। আমরা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলতাম। অথচ তিনি স্বাভাবিক নিয়মে চলতেন।’ তিরমিজি।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর