শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

মহামারীর সময় নিজেকে আবদ্ধ রাখাও সওয়াবের কাজ

যুবায়ের আহমাদ

মহামারীর সময় নিজেকে আবদ্ধ রাখাও সওয়াবের কাজ

পৃথিবীজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নামক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা নির্দেশনা দিচ্ছেন লকডাউন (বদ্ধাবস্থা), হোম কোয়ারেন্টাইন (ঘরবন্দী জীবনযাপন) এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার। মহামারীর সময় নিজেকে নির্দিষ্ট এলাকায় আবদ্ধ রাখা, আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ না করার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে।

লকডাউন বা মহামারী আক্রান্ত এলাকাকে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা, ওই এলাকা থেকে কেউ বাইরে না যাওয়া এবং অন্য এলাকা থেকে কেউ ওই এলাকায় প্রবেশ না করার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যখন শুনবে যে, কোনো ভূখন্ডে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে, তখন সেখানে প্রবেশ করবে না আর যদি তুমি সেই ভূখন্ডে অবস্থান কর, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না।’ বুখারি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই একটি নির্দেশ যদি পৃথিবীবাসী মানত তাহলে হয়তো করোনাভাইরাসের ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো। গেল বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস। প্রথম ধরা পড়ার পরই যদি ‘উহান’ থেকে কারও বাইরে না যাওয়া এবং বাইরে থেকে ‘উহানে’ কারও প্রবেশ না করার বিষয়টি নিশ্চিত করা যেত তাহলে হয়তো পৃথিবীবাসীকে লাশের মিছিল দেখতে হতো না। মানুষ তো পরের কথা, একটি উট সংক্রমিত হলে এ উটটিকে সুস্থ উটের পালে নিতেও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অসুস্থ উটগুলোর মালিক যেন তার উটগুলোকে সুস্থগুলোর পালে পাঠিয়ে না দেয়।’ মুসলিম। বুখারি ও মুসলিমে এ ব্যাপারে বেশ কিছু হাদিস থাকা প্রমাণ করে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের মহামারী ছড়িয়ে পড়ার সময় মুসলমানদের সর্বোচ্চ সতর্কতার ব্যাপারে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরও যদি কেউ এ মহামারীতে মারা যায় তাহলে সে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মুসলমানের জন্য তা শাহাদাত।’ বুখারি।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ মানা আমাদের জন্য ইবাদত ও জান্নাতবাসী হওয়ার কারণ। মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত ‘লকডাউন’ বা ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’কে ইবাদত হিসেবে দেখে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ মেনে নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। মুমিনের জীবন-মৃত্যু ও সব বিষয়ে বিশ্বাস থাকবে আল্লাহর ফয়সালার ওপর। আল্লাহর ফয়সালার বাইরে আমার কিছু হবে না; আল্লাহর দয়াই আমাকে হেফাজত করতে পারে- এ বিশ্বাস রাখা যেমন জরুরি, তেমনি মহামারীর সময় সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর এসব সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক হাদিসে কঠোর নির্দেশনা থাকার পরও তা লঙ্ঘন করা কি গুনার কাজ নয়? ইসলামের কঠোর নির্দেশনা থাকার পরও যদি কেউ এ ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দেয় তাহলে আক্রান্ত হলে তা আত্মহত্যারও শামিল হয়ে যেতে পারে।

লকডাউন বা হোম কোয়ারেন্টাইনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া একটু কষ্টকর বটে। স্বেচ্ছায় নিজেকে জেলখানার মতো আবদ্ধ করে রাখা তো বেশ কঠিন। কিন্তু নিজে সংক্রমিত হওয়া কিংবা অন্যকে সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ নির্দেশনা যদি কোনো মুসলমান হাসিমুখে মেনে নেয়, তার জন্য রয়েছে এক মহাপুরস্কারের ঘোষণা। দুর্যোগপূর্ণ এই সময়ে নিজেকে ইসলামের নির্দেশনা মেনে আবদ্ধ রাখলে মারা না গিয়েও সে পাবে শহীদ হওয়ার মর্যাদা। উম্মুল মুমিনিন অয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ মহামারী চলাকালে ধৈর্যের সঙ্গে নিজের ঘরে অবস্থান করবে এবং এ বিশ্বাস পোষণ করবে যে, তার ওপর এ মহামারী থেকে আল্লাহ যতটুকু চান তার চেয়ে একটুও বেশি কিছু পৌঁছাবে না; এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ শহীদের সমান সওয়াব নসিব করবেন।’ বুখারি।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার এই সময়ে নিজের ও অন্যের নিরাপত্তা রক্ষায় যদি আমরা লকডাউন বা কোয়ারেন্টাইন মেনে চলি তাহলে একদিকে যেমন আল্লাহর দয়ায় আমরা নিরাপদ থাকব বলে আশা করা যায়, অন্যদিকে আক্রান্ত না হলেও কেবল আবদ্ধ থাকায় শহীদের সমান সওয়াব লাভ করতে পারব। আল্লাহ আমাদেদের এ মহামারী থেকে হেফাজত করুন।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার (আবদুল গনি রোড), গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর