শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

আসুন কর্মক্ষেত্র গিবতমুক্ত রাখি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আসুন কর্মক্ষেত্র গিবতমুক্ত রাখি

ব্যক্তি, পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ- সবখানেই আজ গিবতের ছড়াছড়ি। সুযোগ পেলেই আমরা শুরু করে দিই গিবত। এটি আজ মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। গিবতের কারণে  ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হচ্ছে, সহকর্মীদের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হচ্ছে, পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে সমাজ। তবু আমরা থেমে নেই। অফিস, হাটবাজার, দোকান, মার্কেট থেকে শুরু করে উপাসনালয়, চাষাভূষা, অজ্ঞ-মূর্খ, বিদ্বান- কেউই মুক্ত থাকতে পারছি না এর চর্চা থেকে। ইসলামী পরিভাষায় গিবত বলা হয় ‘কারও অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ বলে বেড়ানো, যা সে গোপন রেখেছে অথবা যা সে মানুষের কাছে বলা অপছন্দ করে।

গিবতের সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞা দিয়েছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে জিজ্ঞাসা করলেন, গিবত কাকে বলে তোমরা জানো কি? জবাবে সাহাবায়ে কিরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন। এরপর নবীজি বললেন, তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গিবত। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আমি যে দোষের কথা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গিবত হবে? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গিবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ।’ মুসলিম।

গিবত ইসলামী শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা সামনে-পেছনে দোষ বলে বেড়ায়।’ সুরা হুমাজাহ, আয়াত ১।

হজরত কায়স (রহ.) বলেন, ‘আমর (রা.) তাঁর কয়েকজন সঙ্গীসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যা পচে ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! কোনো ব্যক্তি যদি এ পচামরা খচ্চরের গোশত খায়, তবু তার ভাইয়ের গোশত খাওয়ার চেয়ে ভালো। সঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করলেন, মানুষ তার ভাইয়ের গোশত খায় কীভাবে?  আমর (রা.) বললেন,  গিবত করে।’ আল-আদাবুল মুফরাদ। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাফিয়্যাহ (রা.)-এর উচ্চতা সম্পর্কে মন্দ কিছু বলেছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে, ‘তুমি এমন এক কথা বলেছ, তা যদি সাগরের পানির সঙ্গে মেশানো হতো; তবে সাগরের পানি বিষাক্ত হয়ে যেত।’ আবু দাউদ।

গিবতের ক্ষতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, যে ব্যক্তির গিবত করা হয় তার আমলনামায় গিবতকারীর গিবত পরিমাণ নেকি চলে যায় এবং গিবতকারীর আমলনামায় যার গিবত করা হয় তার সে পরিমাণ গুনাহ চলে আসে। গিবত করা যেমন নিষেধ তেমন গিবত শোনাও নিষেধ। যে গিবত শোনে সে-ও পাপের অংশীদার হয়ে যায়। হাদিসে আছে, ‘যখন কেউ তোমার সঙ্গে বসে অন্যের গিবত করে তখন তাকে থামতে বোলো। আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান কোরো। আর যদি তাতেও কাজ না হয় সেখান থেকে উঠে চলে এসো। কোনোভাবেই গিবত শোনা যাবে না।’ হে দরদি পাঠক! দুঃখের সঙ্গে বলছি, অন্যের দোষচর্চাকে আজ অমরা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিয়েছি। এটি না করলে মনে হয় প্রাত্যহিক জীবনের কী যেন প্রয়োজনীয় কাজটি বাদ পড়ে গেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, গিবতে কখনো অন্যের চরিত্রের বিচার হয় না বরং এতে নিজ চরিত্রই ফুটে ওঠে। আর  অন্যকে কলঙ্কিত ও অপদস্থ করার উদ্দেশ্যে আপনার জিব দিয়ে যে ক্ষতবিক্ষত করছেন, আপনি কি জানেন সে ব্যক্তি যতটা অপদস্থ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি অপদস্থ হচ্ছেন আপনি আপনার প্রভুর কাছে। তাই আসুন জিব আমাদের ওপর পরচর্চা চাপিয়ে দিতে চাইলেও তাকে চেপে ধরে মৌন থাকি; তবেই মুক্তি মিলবে।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন।

সর্বশেষ খবর