বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অধিকার প্রতিষ্ঠার ভ্যানগার্ড ছাত্র-শ্রমিক

মেজর আখতার (অব.)

অধিকার প্রতিষ্ঠার ভ্যানগার্ড ছাত্র-শ্রমিক

যুদ্ধ ক্ষেত্রে পদাতিক বাহিনীর অগ্রভাগে ভ্যানগার্ড বা অগ্রগামী বাহিনী থাকে। ভ্যানগার্ডের মূল দায়িত্ব শত্রু বা বিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে নিজের বাহিনীকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে নিজ পক্ষের বিজয় নিশ্চিত করা। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত যে কোনো বাহিনীর শক্তিমত্তা বিবেচিত হয় ভ্যানগার্ডের আক্রমণ করার দক্ষতা, ক্ষিপ্রতা, বুদ্ধিমত্তা ও পারদর্শিতার ওপর। রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম মূলত একটি যুদ্ধ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে হলে যুদ্ধ তথা আন্দোলন ও সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক যুদ্ধ তথা আন্দেলন ও সংগ্রাম মূলত দুই ভাবে সংগঠিত হয়। প্রথমত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে তাদের ক্ষমতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে। দ্বিতীয়ত জনগণের আস্থা ও ভোট অর্জন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে। রাজনৈতিক যুদ্ধে এ উভয় আন্দোলন-সংগ্রাম খুবই কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাসীনদের প্রতি যদি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করা না যায় তাহলে ক্ষমতাসীনদের বিকল্প রাজনীতি জনগণের সামনে তুলে ধরা যায় না। যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীনদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে না সে দল জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলে। একটি রাজনৈতিক দল কত শক্তিশালী বা সংগঠিত তার চেয়ে বেশি জনগণের কাছে বিবেচ্য হয় সে দল ক্ষমতাসীনদের প্রতি কতটুকু চ্যালেঞ্জিং।

কোনো রাজনৈতিক দলের চ্যালেঞ্জিং শক্তি বলতে সাধারণত বোঝায় ক্ষমতাসীনদের জনস্বার্থ বা স্বেচ্ছাচারী যে কোনো কার্যক্রম বা কার্যকলাপ রুখে দেওয়ার মতো একটি রাজনৈতিক দল বা পক্ষ কতটুকু ক্ষমতা রাখে। ওই রকম শক্তিশালী চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক দল থাকলে জনগণ যেমন স্বাছন্দ্যবোধ করে যে ক্ষমতাসীনরা জনগণের ভাগ্য ও অবস্থা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জনগণও তখন নিশ্চিত থাকে যে তাদের অধিকার ও স্বার্থ সমুন্নত রাখতে ক্ষমতাসীনরা বাধ্য থাকবে। রাজনৈতিক দল জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। যে রাজনৈতিক দলের আদর্শ, কর্মসূচি ও কর্মকান্ডে জনগণের স্বার্থ বেশি প্রাধান্য পায় সে দলের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস তত বেশি বৃদ্ধি পায়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক দলের মধ্যে জনগণের গ্রহণযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তার পার্থক্য তেমন বেশি হয় না। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পালাবদল নিয়মতান্ত্রিক ও সময়মতো অব্যাহত থাকে যার ফলে জনগণের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত থাকে তেমনি রাষ্ট্রে শান্তি, শৃঙ্খলা, আইনের শাসন, জবাবদিহিও নিশ্চিত থাকে। কিন্তু জনগণের কাছে দুই পক্ষের গ্রহণযোগ্যতার তারতম্য যদি বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক পক্ষের বেশি থাকে তাহলে রাষ্ট্রে জনগণের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বিঘিœত হয়, শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, দুর্নীতি তথা জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রম প্রাধান্য পায়। ফলে জবাবদিহির তীব্র শূন্যতা সৃষ্টি হয়, যে কারণে কর্তৃত্ববাদ তথা স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা জনগণের মাথার ওপর নেমে আসে। দুর্নীতি তখন সর্বগ্রাসী রূপ নেয়। এ রকম একটি জনস্বার্থবিরোধী ও কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রচ-ভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে তিরোহিত ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদল দুঃস্বপ্নে পর্যবসিত হয়। স্বৈরাচারী কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনকে তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রহসনে রূপান্তরিত করে। তখন জনগণও নির্বাচনের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পক্ষ বা তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব যত না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক পক্ষের দুর্বলতা, অক্ষমতা বা তাদের অযোগ্যতা। একপক্ষ দুর্বল ও অথর্ব হলে আরেক পক্ষ পরম পরাক্রমশালী হয়ে পড়ে; যা খুবই স্বাভাবিক। স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য ক্ষমতাসীন স্বৈরাচার ও কর্তৃত্ববাদীর চেয়ে তাদের চ্যালেঞ্জিং পক্ষই বেশি দায়ী। যে কোনো দেশের স্বাভাবিক নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও জনগণের অধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক পক্ষের ওপরই মূলত নির্ভরশীল। তাই শক্তিশালী চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক দল দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সবার আগে প্রয়োজন।

একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক দল হতে হলে ওই দলের সাংগঠনিক শক্তির চেয়ে তাদের শক্তিশালী শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠন থাকতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত কলকারখানা ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চ্যালেঞ্জিং রাজনৈতিক দলের একচ্ছত্র আধিপত্য না থাকবে তত দিন পর্যন্ত জাতীয় রাজনীতিতে যেমন চ্যালেঞ্জিং পক্ষের গুরুত্ব থাকবে না, তেমনি কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাসীনদের সামনে তারা কোনো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। চ্যালেঞ্জিং হতে হলে দেশের বেশির ভাগ কলকারখানায় শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে শক্তিশালী ছাত্র সংগঠনও জরুরি, কারণ সবচেয়ে রাজনৈতিক ও ক্রিয়াশীল মস্তিষ্ক হলো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ছাত্ররা তাদের বয়স ও অবস্থানের কারণে সব সময় প্রতিবাদী হয়। ছাত্রদের নৈতিক অবস্থান উন্নত থাকে এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি বিষয়ে ছাত্ররা সব সময় অনুশীলনে লিপ্ত থাকে, যার ফলে রাজনৈতিকভাবে ছাত্ররা অনেক বেশি সচেতন। কেন চ্যালেঞ্জিং পক্ষের বা দলের জন্য শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন প্রয়োজন তা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করলে বুঝতে সহজ হবে।

১. শ্রমিক তার কর্ম করার কারণে সব সময়ই ক্ষুদ্র বা বৃহৎ পরিসরে এক জায়গায় বা স্থানে অবস্থান করে। ছোট বড় যে কোনো কলকারখানায় একাধিক বা কয়েক হাজার শ্রমিক এক জায়গায় কাজ করে। ফলে কাজের শিফটে দিনে বা রাতে অনেক শ্রমিককে এক জায়গায় সমবেত করা যায়। বিশেষত শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের বৃহৎ সমাবেশ যেমন ঘটানো যায় তেমনি ক্ষমতাসীনদের অপকর্মের বিপক্ষে কার্যকর ও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

২. শ্রমজীবীদের স্বার্থ অভিন্ন তাই তাদের মধ্যে বৃহৎ ঐক্য গড়ে তোলা সহজতর।

৩. সব শ্রমিক প্রায় একই সঙ্গে কাজে আসে এবং ঘরে ফিরে যায়। ফলে আসা-যাওয়ার সময় রাজপথে শ্রমিকদের সমবেত করা সহজ হয় এবং তাদের নিয়ে রাজপথে সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সহজ হয়।

৪. সংঘবদ্ধ থাকায় শ্রমিকদের সহজে কেউ বাধা দিতে পারে না। ফলে শ্রমিকদের চলাচলের ওপর পুলিশ বা সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবও নয়।

৫. শ্রমিকদের কোনো দাবি-দাওয়ার বিরোধিতা মানে সাধারণ শ্রমিকদের বিরোধিতা করা, যার ফলে বিরোধিতাকারীরা সাধারণ শ্রমিকদের প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাই সাধারণ শ্রমিকরা সব সময় তাদের চিহ্নিত বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

৬. জনপ্রিয় ইস্যুতে যে কোনো সময় শ্রমিকদের এক জায়গায় সমবেত করানো যায়।

৭. জনপ্রিয় ইস্যুতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মিছিল বা প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ করানো যায়।

৮. দক্ষ ও শক্তিশালী শ্রমিক তথা ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে যে কোনো আন্দোলনে-সংগ্রামে ব্যাপক জনসমাগম করানোসহ ক্ষমতাসীনদের চাপে রাখা যায়।

৯. শ্রমিকরা মূলত শ্রমজীবী হওয়ায় তারা যে কোনো আন্দোলন ও সংগ্রামের কষ্ট সহ্য করতে পারে এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের সাহস রাখে।

১০. শ্রমিকদের খুব সহজেই পুলিশ বা প্রশাসন গ্রেফতার করতে পারে না এবং গ্রেফতার করলেও বেশিদিন জেলহাজতে রাখতে পারে না। কারণ শ্রমিকের মালিকপক্ষ তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে বাধ্য হয়।

১১. শ্রমিকদের ভাগ্য ও কর্মের সঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন জড়িত। ফলে ক্ষমতাসীনরা তাদের প্রতি চরম ও কঠোর হতে পারে না।

১২. শ্রমিকরা শ্রমজীবীর পাশাপাশি পেশাজীবীও। ফলে অন্য পেশাজীবী প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না।

১৩. একজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিতে পারে না, কারণ শ্রমিকের জীবনের দিনপঞ্জি আছে। শ্রমিকের প্রতিদিনের উপস্থিতির হিসাব তার কার্যক্ষেত্রে থাকে। ফলে পুলিশের মনগড়া কোনো চাল সেখানে অচল।

১৪. কোনো শ্রমিককে গুম ও খুন করা সম্ভব নয়। কারণ শ্রমিকের মালিককে তার হেফাজতের তথা নিরাপত্তার দায়দায়িত্ব নিতে হয়। শ্রমিকদের মতো শক্তিশালী ছাত্র সংগঠনও ক্ষমতাসীনদের সামনে খুব সহজেই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ-

১. ছাত্ররা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য একই সময় এক স্থানে সমবেত থাকে।

২. ছাত্ররা রাজনৈতিকভাবে অতিমাত্রায় সচেতন।

৩. ছাত্ররা চ্যালেঞ্জিং হতে খুবই উৎসাহী থাকে।

৪. ছাত্ররা অতিমাত্রায় রোমান্টিক ও আবেগপ্রবণ।

৫. ছাত্ররা সাধারণত উচ্চমাত্রার নৈতিকতার প্রত্যাশী।

৬. ছাত্ররা সব সময় তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।

৭. ছাত্ররা সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে মুখিয়ে থাকে।

৮. ছাত্রদের পারস্পরিক সম্পর্ক যেমন মধুর তেমনি প্রতিযোগিতামূলক। ফলে তারা সব সময় একে অন্যকে ডিঙাতে চায়।

৯. ছাত্রদের মধ্যে থাকে প্রচ- দেশপ্রেম যা তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে উৎসাহিত করে।

১০. কর্তৃত্ববাদী শাসকদের পক্ষাবলম্বন করতে সাধারণ ছাত্ররা ঘৃণাবোধ করে।

১১. ছাত্রদের অভিভাবকই হলো প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, সামরিক, বেসামরিক সব পেশাজীবী, সুশীলসমাজ, কৃষক, শ্রমিক তথা সবাই। ফলে ছাত্রদের ওপর প্রশাসন ও পুলিশ কোনো অত্যাচার, অবিচার, জুলুম বা নির্যাতন করতে পারে না।

১২. কোনো ছাত্রকে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ মামলা দিতে পারে না, গ্রেফতার দূরের কথা। কারণ সব ছাত্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের কলেজের অধ্যক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।

১৩. কোনো ছাত্রকে গুম, খুন করার সুযোগ কারও থাকে না।

১৪. বিনা বিচারে কোনো ছাত্রকে আটক করার ক্ষমতা পুলিশের নেই।

১৫. ছাত্ররা কোনো সমাবেশ, সভা, মিছিল বা বিক্ষোভ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চৌহদ্দির মধ্যে করলে পুলিশের সেখানে বাধা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা থাকে না।

১৬. ছাত্ররা যে কোনো জনপ্রিয় ইস্যুর ওপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে বা ক্ষেত্রবিশেষ অনুমতি ছাড়া ছাত্রদের সার্বিক স্বার্থে সভা, মিছিল, সমাবেশ বা প্রতিবাদ করতে পারে।

১৭. ছাত্ররা সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই সময় আসা-যাওয়া করে। ফলে রাজপথে তারা একসঙ্গে যে কোনো অপকর্ম বা অনিয়ম বা স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে, প্রতিবাদে জোরালো অবস্থান নিতে পারে।

১৮. ছাত্র নেতৃত্ব বিকশিত করা শিক্ষকদের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব যা কোনো অবস্থাতেই কোনো শিক্ষক অবজ্ঞা করতে পারেন না। যদি কোনো শিক্ষক অবজ্ঞা করেন তাহলে তা তার নৈতিক অবক্ষয় বলে চিহ্নিত হবে।

শ্রমিক ও ছাত্রদের অনেকে মনে করে যে কোনো চ্যালেঞ্জই রাজনৈতিক দলের ভ্যানগার্ড। তারাই পারবে যে কোনো স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী শাসককে দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে। তবে শ্রমিক বলতে তাদেরই বোঝাবে যারা কোনো কলকারখানা বা প্রতিষ্ঠানে শ্রমজীবী হিসেবে নিয়োজিত ও তালিকাভুক্ত। একইভাবে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্রদেরই ছাত্র হিসেবে গণ্য করতে হবে। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র নয় এমন কাউকে ছাত্র পরিচয়ে ছাত্র সংগঠনে রাখা অনৈতিক এবং রাজনৈতিক দলের দেউলিয়াপনা। ছাত্র সংগঠন হবে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এবং রাজনৈতিক সংজ্ঞায় ছাত্র হলো উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নিয়মিত ছাত্র তা ছেলে বা মেয়ে যা-ই হোক না কেন। মাধ্যমিক ও তার নিচের স্তরের ছাত্রদের কোনো অবস্থাতেই ছাত্র সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না এবং যদি কোনো রাজনৈতিক দল তা করে তাহলে তা তাদের অনৈতিক কাজ বলে গণ্য হবে। একইভাবে যারা নিয়মিত ছাত্র নয় তাদেরও ছাত্র সংগঠনে যেমন নেওয়া যাবে না তেমনি ছাত্রদের নেতৃত্বেও রাখা যাবে না। ছাত্র সংগঠনের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম,  জেলা বা উপজেলা বলে কোনো কমিটি হতে পারে না। কমিটি হতে হবে ঢাকা, জগন্নাথ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি বা তিতুমীর, তেজগাঁও, ঢাকা, নরসিংদী কলেজ কমিটি ইত্যাদি। একইভাবে শ্রমিক সংগঠন হবে শ্রমপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক যেমন রেল শ্রমিক সংগঠন, বাস পরিবহন, নৌপরিবহন, গার্মেন্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা এ রকম বিভিন্ন শিল্প ইউনিট শ্রমিক সংগঠন। বহিরাগতরা শ্রমিক সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। শক্তিশালী শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠন চ্যালেঞ্জিং রাজনীতির ভ্যানগার্ড। কর্তৃত্ববাদী সরকার হটানোর আন্দোলন ও সংগ্রামে তথা নতুন যুদ্ধে এ ভ্যানগার্ড শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে জনগণের অধিকার ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। যতক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র ও শ্রমিকদের নিয়ে একটি শক্তিশালী ভ্যানগার্ড তৈরি না করা যাবে তত দিন পর্যন্ত কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়া যাবে না। লড়তে হলে ঝুঁকি নিতে হবে। এজন্য ভ্যানগার্ড লাগবে। জয় জনগণের হবেই হবে।

                লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর