শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানুষ কেন জাহান্নামি হবে

মো. আমিনুল ইসলাম

মানুষ কেন জাহান্নামি হবে

একজন পরহেজগার ব্যক্তিও জাহান্নামে যেতে পারে। কারণ যারা বান্দার হক নষ্ট করে এবং আল্লাহর হক ঠিকমতো পালন করে না তারা কোরআন ও হাদিসের আলোকে দোজখবাসী। এদের জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। যারা কবিরা গুনাহে লিপ্ত তারাই দোজখবাসী। একমাত্র তওবা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তারা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘হে রসুল, যারা দ্রুতগতিতে কুফরির পথে ধাবিত হচ্ছে তাদের এ বিষয়টি যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়, এরা সে দলের লোক যারা মুখে বলে আমরা ইমান এনেছি কিন্তু সত্যিকার অর্থে তাদের অন্তর কখনো ইমান আনেনি। যারা ইহুদি তারাও মিথ্যা কথা শোনার জন্য সদা কান খাড়া করে রাখে এবং বন্ধু সম্প্রদায়ের যেসব লোক কখনো তোমার কাছে আসেনি এরা সে অপর সম্প্রদায়ের জন্যই নিজেদের কান খাড়া করে রাখে তারা আল্লাহর কিতাবের কথাগুলো আপন জায়গায় বিন্যস্ত থাকার পরও তাকে বিকৃত করে এবং অন্যদের কাছে বলে হ্যাঁ যদি এ ধরনের বিধান তোমাদের দেওয়া হয় তাহলে তোমরা তা গ্রহণ কর আর তা দেওয়া না হলে তোমরা সতর্ক থাক। আল্লাহতায়ালা যার পথচ্যুতি চান তাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচানোর জন্য তুমি কিছুই করতে পারবে না, এরাই হচ্ছে সেসব হতভাগ্য লোক, আল্লাহতায়ালা  যাদের অন্তরগুলোকে পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা আর পরকালে বিরাট শাস্তি। (সুরা মায়েদা, আয়াত ৪১)।’

কবিরা গুনাহ কী? কবিরা গুনাহ হলো- আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.) কর্তৃক আরোপিত ফরজ কাজ না করা এবং হারাম (নিষিদ্ধ) কাজ থেকে বিরত না থাকা। সুতরাং কবিরা গুনাহগার দোজখের বাসিন্দা হয়ে যাবে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস থাকার পরও ইমানদার ব্যক্তি দোজখে যেতে পারে যেসব কারণে তা হলো- আল্লাহর হক আদায় না করা। কাফিরদের স্থান হলো চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকার করেছে তাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর আজাব থেকে তাদের বাঁচানোর ব্যাপারে কখনই কোনো উপকার করবে না। তারাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১০)।

আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা বা অংশীদার করা হলো সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং এ অপরাধীরা জাহান্নামি। মুশরিকরা জাহান্নামি। আল্লাহ বলেন, ‘আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্য থেকে যারা কাফির তারা জাহান্নামের আগুনে চিরকাল থাকবে। এরা হলো নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।’ (সুরা বাইয়িনাহ, আয়াত ৬)। আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শিরক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করে ইমানদার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম শরিফ)। সুবহানাল্লাহ।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে নামাজের ওপর সবচেয়ে বেশি ইরশাদ করেছেন। বলেছেন, আকিমুস সালাত। তোমরা নামাজ কায়েম কর। অথচ আমাদের সমাজে আমরা নামাজের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদাসীন। কেউ লোক দেখানো নামাজ পড়ি। কেউ নামাজ পড়তে গড়িমসি করি। কেউ জুমা আর দুই ঈদের নামাজ ছাড়া আর কোনো নামাজ পড়ি না। অথচ কেয়ামতের ময়দানে প্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের।

ঠিকমতো জাকাত আদায় করা না হলে তারাও জাহান্নামি হবে। আল্লাহ দুনিয়াতে কাউকে ধনী কাউকে গরিব করেছেন পরীক্ষার জন্য। সুতরাং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে প্রত্যেক সম্পদশালীকে ঠিকমতো জাকাত আদায় করতে হবে। সম্পদের প্রকৃত মালিক হলেন আল্লাহ, সুতরাং তাঁর দেওয়া সম্পদ তাঁর নির্দেশিত পথে খরচ না করলে জাহান্নামি হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। রমজানের রোজা পালন করাও একজন ইমানদারের জন্য ফরজ। ওজর ছাড়া রোজা না রাখলে সে হবে গুনাহগার। পরকালে তার জন্য রয়েছে অবধারিত শাস্তি। সামর্থ্যবান মুসলমান ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ। এক্ষেত্রে কোনো শিথিলতার সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন, মানুষের ওপর আল্লাহর এ অধিকার যে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার শক্তি ও সামর্থ্য রাখে সে যেন হজ করে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের আখেরাতে উঁচু মর্যাদা দিতে চান তাই তিনি চান তারা যেন দুনিয়ার বুকে ভালো বলে বিবেচিত হন। তারা যেন বান্দার হক নষ্ট না করেন। অন্যের হক নষ্ট করাকে আল্লাহ অপছন্দ করেন বিশেষ করে কেউ যেন এতিমের হক গ্রাস না করে। দুনিয়াতে যেন কেউ কারও ওপর জুলুম না করে। আল্লাহ দুনিয়ার জীবনে কেউ কারও প্রতি জুলুম করাকে পছন্দ করেন না। রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়তা ছিন্নকারীকেও আল্লাহ পছন্দ করেন না। পিতা-মাতার সঙ্গে অসদাচরণকারীকেও আল্লাহ পছন্দ করেন না। অন্যের অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে কিছু বলা বা সমালোচনা করার নাম হলো গিবত। কোরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় একে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গিবত অতি নিকৃষ্ট কাজ। সুদ খাওয়া, ব্যভিচার, ওজনে কম দেওয়া সবকিছুই আল্লাহর অপছন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ শাস্তির পরিণাম হলো জাহান্নাম। সুতরাং জাহান্নামের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে কোরআনে নিষিদ্ধ ও আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ আমাদের বর্জন করতে হবে। তা না হলে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর