শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রোজার গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

রোজার গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েল

১. ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে না (জাওয়াহিরুল ফতোয়া)।২. ইনহেলার ব্যবহার। শ্বাসকষ্ট রোগীর জন্য তরল জাতীয় স্প্রে মুখের ভিতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়, তাৎক্ষণিকভাবে আরাম পাওয়ার জন্য। এভাবে গলায় ওষুধ প্রবেশ করানোর দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (এমদাদুল ফতোয়া)। ৩. এনজিওগ্রাম ব্যবহার। হার্ট ব্লক হয়ে যাওয়ার পর ঊরুর ভিতরের বিশেষ রগের মাধ্যমে ক্যাথেটার প্রবেশ করে হার্ট পরীক্ষা করা হয়। এ যন্ত্রের ভিতরে যদি কোনো ধরনের ওষুধ লাগানোও থাকে, তদুপরি রোজা ভাঙবে না।

৪. এনডোসকপি ব্যবহার। ছোট্ট নরম একটি চিকন নল, যার মাথায় একটি ছোট্ট বাল্ব জাতীয় ক্যামেরা লাগানো থাকে এবং সেটাকে পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয়। বাইরে থাকা মনিটরে দেখে পাকস্থলীর রোগ নির্ণয় করার জন্য। যদি এই নলের ভিতর এবং বাইরে কোনো ওষুধসহ পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয় এবং সেখানে কোনো ধরনের ওষুধ, পানি বা তরল জাতীয় কিছু ছিটানো হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। আর যদি খালি এবং শুকনা থাকে, তাহলে রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)। ৫. নাইট্রোগিসারিন ব্যবহার। তাৎক্ষণিক হার্টের সুস্থতার জন্য এরোসল জাতীয় তরল একটি স্প্রে জিব্বার নিচে দিয়ে কিছুক্ষণ মুখ বন্ধ করে রাখা হয়। ওষুধটি শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। মুখে ব্যবহারের ফলে গলার মাধ্যমে পেটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাই ওষুধটি ব্যবহারের ফলে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)।

৬. লেপারুসকপি ব্যবহার। শিক জাতীয় একটি যন্ত্র, যার মাধ্যমে পেটের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা করার জন্য সেখানের কোনো গোশতের অংশবিশেষ বের করে নিয়ে আসা হয়। সেই যন্ত্রে যদি কোনো ওষুধ লাগানো থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। অন্যথায় রোজা ভাঙবে না। (আল মাক্বালাতুল ফিকহিয়্যাহ)। ৭. অক্সিজেন ব্যবহার। রোজা অবস্থায় ওষুধ মিশ্রিত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাস জাতীয় অক্সিজেন ব্যবহার দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ মাসায়েল)। ৮. মস্তিষ্কে অপারেশন। রোজা অবস্থায় মস্তিষ্ক অপারেশন করার দ্বারা রোজা ভঙ্গ হবে না। তাতে ওষুধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক। (আল মাকালাতুল ফিক্বহিয়্যাহ)। ৯. রক্ত দেওয়া বা নেওয়া। রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে বা গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে অতিরিক্ত রক্ত দিয়ে শরীর দুর্বল হলে রোজা মাকরুহ হবে। (আহসানুল ফতোয়া)। ১০. সিস্টোস্কোপি ব্যবহার। প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে যন্ত্রটি প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এতে রোজা ভাঙবে না। (হিদায়া)। ১১. প্রসটুস কপি ব্যবহার। পাইলস বা ফিস্টুলা জাতীয় রোগের চিকিৎসার জন্য মলদ্বার দিয়ে যন্ত্রটি ওষুধ ও গ্লিসারিনসহ প্রবেশ করানো হয়। এতে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতোয়ায়ে শামী)। ১২. কপারটি ব্যবহার। নারীর যোনীতে কপারটি ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে এবং তাতে সহবাস করলে উভয়ের রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা কাফফারা ওয়াজিব হবে। ১৩. সিরোদকার অপারেশন। অকাল গর্ভপাত রোধ করার জন্য জরায়ুর চতুর্পাশে সেলাই করে আটকে দেওয়া হয়। যেহেতু এতে কোনো ওষুধ ভিতরের খালি জায়গায় প্রবেশ করে না, তাই রোজা ভাঙবে না। ১৪. ডিএনসি অপারেশন। ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের জীবিত বা মৃত বাচ্চা গর্ভপাত করানোর জন্য জরায়ুতে যন্ত্র প্রবেশ করানো হয়। এতে রোজা ভেঙে যাবে। বিনা কারণে অন্যায়ভাবে করলে গুনাগার হবে। কাজা কাফফারা ওয়াজিব হবে এবং তওবা করতে হবে। (হেদায়া)।  ১৫. এমআর গর্ভপাত। ৫ থেকে ৮ সপ্তাহের ব্রুণ জরায়ু থেকে সিরিজের মাধ্যমে বের করে নিয়ে আসা কে বলা হয়।  অতঃপর যদি মাসিক শুরু হয়ে যায়, তাহলে রোজা কাজা করতে হবে। (ফতহুল কাদির)।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলারবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর